মন্ত্রীরা “ভেজাইল্লা” ভীত বলে সংসদে তোপের মুখে সুরঞ্জিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০১৬, ৭:২৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ আজ সন্ধ্যায় সংসদ অধিবেশনের সময় প্রথম সারিতে কোনো মন্ত্রী না থাকায় সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার বক্তব্যে বলেন, মার্কিন যুক্তারাষ্ট্রের দেশ দখলের হুমকিতে মন্ত্রী বাহাদুররা সংসদ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। সেই সাথে তিনি ‘ভেজাইলা’ মন্ত্রী এমন বক্তব্য রাখায় সংসদে তোলপাড় শুরু হয়। তার বক্তব্যের পর প্রতিবাদ করেন, জাহাঙ্গির কবির নানক, চিফ হুইপ ও শামীম ওসমান।বৃহস্পতিবার সংসদে মন্ত্রীদের অধিকাংশের অনুপস্থিতির বিষয়ে ডেপুটি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাকপটু রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত সুরঞ্জিত বলেন, “মর্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশ দখল তারা করবেন না। সাহায্য করার জন্য উনি চেষ্টা করবেন। “এ কথায় মনে হল, ইচ্ছা করলে তারা দখল করতে পারে এবং দখল বহালও রাখতে পারে। এ ধরনের হুমকি আমেরিকানরা দিচ্ছেন! এই হুমকিতেই কি তাহলে মন্ত্রী বাহাদুররা তাদের নিরাপত্তার জন্য যে যার জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করছেন?”রাষ্ট্রদূতের ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত’ ওই বক্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “এ ধরনের কোনো হুমকি কোনো দেশের কোনো কূটনীতিকের দেওয়া শোভনীয় নয়। এ ব্যাপারে অন্তত আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় একটি জোরদার আপত্তি দেবেন বলে আমরা আশা করি।”এরপর মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে ফিরে সুরঞ্জিত স্বভাবসুলভ রসিকতার ভঙ্গিতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে ‘ভেজাইল্যা মন্ত্রী’ বলেন।“আপনি (ডেপুটি স্পিকার) অন্তত সামনের অধিবেশনগুলোতে যেন বলেন, সংসদ চালাতে হলে অন্তত সামনের সারির দু-এক মন্ত্রী হলেও রাখবেন। মেনন সাহেব তাকাইতেছেন, উনি তো ভেজাইল্যা মন্ত্রী। এসব ভ্যাজাইল্যা মন্ত্রী দক্ষিণে হলে কী করবেন? অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ লাগছে।”সুরঞ্জিতের বক্তব্যের সময় বিমানমন্ত্রী মেনন ছাড়াও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সংসদ কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।মেনন ছাড়া উপস্থিত বাকি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সামনের সারিতে বসেন না। মেনন সামনের সরিতে বসলেও সেটা বিরোধী দলের পাশে।সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিতের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “মাননীয় মন্ত্রীরা কেবল ঢাকায় নয়, শুক্রবার-শনিবার এলাকায় গিয়ে অফিস করেন বলেই এখন সংসদে নেই। মাননীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একটা শব্দ বলেছেন, সেটা এক্সপাঞ্জ করা হোক- ‘মনে হয় যেন মন্ত্রীরা পালিয়ে গেছে’।”যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য গণমাধ্যমে ‘সঠিকভাবে’ আসেনি বলেও নানক দাবি করেন।ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী এ সময় বলেন, “আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। যদি আনপার্লামেন্টারিয়ান কোনো শব্দ থাকে তবে এক্সপাঞ্জ করব।”তবে এরপর প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ একটি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্নিকাটের বক্তব্য শুনিয়ে বলেন, “পত্রিকায় এটা এসেছে। এখানে যে ব্ক্তব্য (সুরঞ্জিতের বক্তব্য) এসেছে, সেটা ঠিক না।”তারপর নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করলে তাকে ফ্লোর দেন ডেপুটি স্পিকার।শামীম ওসমান বলেন, “আমাদের অত্যন্ত সিনিয়র নেতা আমার পিতৃতুল্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, মন্ত্রীরা ভীত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন তারা গুরুত্বপূর্ণ নেতা, তারা মোটেও ভীত নন। একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলার সময়েও তারা ভীত হননি।“এই নেতাদের এখানে অসম্মানিত করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এধরনের মন্তব্যে আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই।”সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের কথা বলার সময় কী বার্তা যাচ্ছে সেটা মাথায় রেখে কথা বলা উচিৎ। সব সময় মন্ত্রীরা এখানে উপস্থিত থাকেন। মন্ত্রীদের উপস্থিতি এরকমই থাকে।”যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের ভাষাও যথাযথ হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে সুরঞ্জিতের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “একজন অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি হুমকি দেবে! পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্যই তাকে ডেকে এর সদুত্তর দেবেন।”মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনাদের তখন ভূমিকা কী ছিল? ইয়াহিয়াকে সমর্থন করেছিলেন। এর জন্য ক্ষমতা চেয়েছেন?“আপনাদের দেশে কী হচ্ছে? নাইট ক্লাবে ৫০ জন খুন হয়েছে। তাহলে কি এখন আমরা আপনার দেশ দখল করতে যাব? এটা ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান না, এটা বাংলাদেশ।”