জুবায়ের আহমেদঃ বিড়ম্বনা কাটছেই না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার৷ নিজে জড়িয়ে রয়েছেন আর্থিক দুর্নীতির মামলায়৷ এবার তাঁর ‘পলাতক’ বড় ছেলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথটিও প্রায় বন্ধ হয়ে গেল ৷ কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার মামলায় লন্ডন অবস্থানরত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে হাইকোর্ট৷ এই মামলায় তারেক রহমানের ব্যবসায়িক বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। ২০ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে৷অভিযোগ, ঢাকার কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তারেক রহমান৷ এরজন্য তিনি ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রা) ঘুষ নেন তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন মামুন৷ এর মধ্যে তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা তারেক রহমান খরচ করেন। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে করে তারেক ও মামুনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দাখিল করেছে৷ সেই মামলায় তারেক রহমানকে খালাসের রায় দিয়েছিল নিম্ন আদালত৷ হাইকোর্ট তা খারিজ করেছে৷ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখ্রুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তারেক রহমানের মতো নেতৃত্বকে দূরে রাখতেই এমন কৌশল নিয়েছে সরকার৷ অপরদিকে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন লন্ডনে বসে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আপিল করার কোনো সুযোগ নেই । বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে সচিবলায়ে আইন মন্ত্রণালয়ে আনিসুল হক বলেন, লন্ডনে বসে তারেক রহমানে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই, তাকে দেশে এসে আত্মসমর্পন করে অথবা তাকে ধরে আনলে আপিলের সুযোগ পাবেন। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধী হস্তান্তর চুক্তি না থাকলেও ইন্টারপোলে সাহয্যে তারেককে ধরে আনা যেতে পারে। আমরা তাকে দেশে এনেই রায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন মামলার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমরা স্তম্ভিত ও হতবাক। সমগ্রজাতি এতে হতবাক হয়েছেন। তারেক রহমান বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। তাকে মিথ্যাভাবে আওয়ামী লীগ সরকার দুদককে দিয়ে এ মামলা দায়ের করেছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, ‘ট্রায়াল কোর্টে এ মামলায় কোথাও তারা প্রমাণ দিতে পারেনি গিয়াস উদ্দিন মামুন এক টাকাও বিদেশে নিয়েছেন। তারপরও তাকে সাজা দিয়েছে। আর তারেককে খালাস দিয়েছিলেন।’আইনজীবী সমিতির সম্পাদক বলেন, ‘এরপর দুদক আপিল করেছে। আজকে আদালতে দেখেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল, দুদকের কৌসুলি ও আওয়ামী লীগের সকল নেতা ছিলেন, বড় বড় নেতা (আইনজীবী) আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আজকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও দুদকের কৌসুলিরা একাকার হয়ে গেছেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আপিল বিভাগে ন্যায় বিচার পাবো।’বিএনপিপন্থী অপর আইনজীবী ও দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তারেক রহমান কোনো অবস্থাতেই এ মামলায় জড়িত ছিলেন না। তা সত্বেও তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ মামলার সাক্ষী প্রমাণে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তিনি নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়েছেন। আদালত রায় দিয়েছেন, তাতে তিনি খালাস পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের কোনো কিছু পায়নি। উদ্দেশ্যেমূলকভাবে তাকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। পরে ওই মামলার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। আজ হাইকোর্ট খালাসের রায় বাতিল করে নতুন করে তাকে (তারেক) সাত বছরের দণ্ড দিয়ে জরিমানাও করেছেন।এই রায় যথাযথ হয়নি উল্লেখ করে জয়নুল আবেদন আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে সেটা যথাযথভাবে হয়নি। এবং তারেক রহমান ন্যায় বিচার পাননি। কারণ তিনি জড়িত ছিলেন না। সব কিছুতেই তারেক রহমানকে নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। আমরা তার সাথে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায় পেয়ে বিচার বিশ্লেষণ করবো।’