শেখ হাসিনাতো এখন অসহায় লোক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৬, ৬:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা ডেস্কঃ
সংসার বিরাগী এক মানুষ। ওসমানী উদ্যানে গাছগুলোতে মরা ছাল খোদাই করে আরবি হরফে ‘আল্লাহু’ লিখে যাচ্ছেন। যাতে স্পষ্ট বুঝা যায় সে কারণে চুনও লাগিয়ে দিচ্ছেন। তার ভাবনাগুলো অদ্ভুত। ধর্ম, রাজনীতি, আইএস, জঙ্গিবাদ, মানুষের চরিত্র সব কিছুতেই তার বক্তব্য রয়েছে। শুনুন তার মুখেই তার জীবন দর্শন:
আইএস আল্লাহ খোদার নাম ভাঙাচ্ছে। আল্লাহ, নবী-রাসুলকে বিক্রি করছে। এদের মুখোশ একদিন খুলবে। এর থেকে পরিত্রাণের পথ একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাইতে হবে। তার জন্য আগে নিজেকে ভালো হতে হবে। ভালো হওয়ার পূর্বশর্ত হলো ঈমান। ঈমান আনার পূর্বশর্ত হলো হালাল রিজিক। চিন্তা-ভাবনা হালাল করতে হবে। আমি যখন হালাল খাবার খাবো, তখন আমার চিন্তা-চেতনা সবকিছু হালাল হবে। আসলে আমরা রিজিক কোথা থেকে আসলো সেটাই খেয়াল করছি না।
ধরেন, আপনি একটা অফিসে কাজ করেন। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিটি পরে যদি আপনি আসেন তাহলে, সম্পূর্ণ শ্রমটা আপনি দিতে পারছেন না। এ পাঁচ মিনিটিরে কারণে যে পয়সাটা নিচ্ছেন তার পুরোটাই হারাম হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসার ক্ষেত্রেও মিথ্যা কথা বলছি। কাস্টমার বললো, ‘ভাই এক কেজি আম দেন। ভালো দেখে।’ এখন আমি দিচ্ছি সবচেয়ে খারাপটা। বলছি এটাই একেবারে ভালোটা। সেও বিশ্বাস করে নিচ্ছে।
আমাদের মানসিকতাগুলো এরকম হয়েছে গেছে। সবার উপরে ওঠার লক্ষ্য। ঈমানের উপরে ওঠার লক্ষ্য না । কীভাবে পয়সার উপরে ওঠবে। গায়ের জোরে, ক্ষমতার জোরে, কে কতো উঠতে পারে, সেই প্রতিযোগিতা। আল্লাহ তো সেটা বলেননি।
জঙ্গিদের আক্রমণ তাদের শক্তি বাড়ানোর জন্য। সিরিয়ার তেলকূপলো আইএস দখলে নিয়েছে। সে তেল কারা কিনছে? যারা কিনছে তারাই তো জঙ্গিদের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। আবার তারাই বলছে জঙ্গি। যারা জঙ্গি বলে তারাই তো জঙ্গি বানাচ্ছে। যদি তা না হয়, আমি জঙ্গিদের তেল কেনো কিনবো?
জঙ্গিরা তেল বিক্রি করে এতো শক্তিশালী। তাদের থেকে তেল কেনার দরকার নেই। তেল তো কিনছেই তাদেরকে আরো অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। আগে যার তেলের কূপ ছিল তার থেকে কিনতো। এখন সবকিছু আইএস দিয়ে দখলে নিয়েছে। আইএস থেকে তেল কিনছে।
বাংলাদেশে আইএস একটা ভুয়া জিনিস। বাংলাদেশের হামলাগুলোতে আইএস এর হাত আছে; এটা আমি বিশ্বাস করি না। যারা বাংলাদেশ থেকে আইএসে যোগ দিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে এসব পথভ্রান্ত হওয়ার কারণে। তারা ইসলাম না জেনে না বুঝে হুরের আশায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। মানুষ মেরে তো জান্নাত পাওয়া যাবে না। হুর তো বহু দূরে।
জান্নাত তো নিজের কাছে। আমি যদি জান্নাত চাই তাহলে, আমার চরিত্র দিয়ে, আমার সেবা দিয়ে সেটা অর্জন করবো। কাউকে ছুরি মেরে হত্যা করে; বিদেশি যে মেহমানদের হত্যা করা হলো- যেখানে আমার জান দিয়ে বিদেশি মেহমান রক্ষা করার কথা ছিল সেখানে আমি তাদের মেরে দিলাম। এটা আবার কোন ইসলাম? ইসলামে তো কারো ধর্মের ক্ষতি করার কথা বলা হয়নি। ইসলাম বলেছে, তোমার জানের উপর যদি বিপদ আসে তুমি ঢাল ব্যবহার করো। কাউকে মারার জন্য বলেনি।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমার আখলাক, কাজকর্ম সব দেখে অন্যধর্মের লোক ইসলাম গ্রহণ করবে। এরকম রাইফেল নিয়ে গুলি করে মানুষ মেরে আমি জঙ্গি এটার নাম ইসলাম না। এটা ইসলাম বলেনি। এভাবে ইসলাম হয় না। ভালোবাসা দিয়ে আখলাক দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হয়।
ভাই আমার যেখানে রাত সেখানে কাত। পুরো বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। এইযে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নাম লিখতেছি এটা আমি যেখানে যাই সেখানে লিখতেছি। সেখানেই থাকতেছি। আগে খোদাই করে লিখতাম। মুছে যায়। এখন মানুষেরও চোখে দেখার ক্ষমতা কম। তাই আমার আল্লাহুটা দেখে না। তাই একটা পদ্ধতি বের করেছি। আগে খোদাই করি তার উপর চুন লাগিয়ে দিচ্ছি। কেউ তো টাকা দেয় না রঙ কেনার। আমি তো আল্লাহর কাজ করতেছি।
খাওয়া দাওয়া আল্লাহর তরফ থেকে। আমি যে ক্ষুধার্ত, আমি পিপাসার্ত এটা আল্লাহ জানেন। আল্লাহর কাজ করি আল্লাহ আমারে খাওয়ায়। কেমনে খাওয়ায় আল্লাহই ভালো জানেন। আপনে বিশ্বাস করবেন না, এক ভিখারী ভিক্ষা করে এনে আমাকে খাওয়ায়।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বাবু। কেউ জানে মধু বাবু, কেউ ডাকে কন্ট্রাক্টর বাবু। বাবার নাম মোহাম্মদ ঈসমাইল হোসেন ভূইয়া। আমার নাভি পোঁতা হলো খুলনার খালিসপুরে। পড়াশোনা করা হয়নি। পড়তে লিখতে পারি এই। এটাই আমার পড়াশোনা। আরবি পড়াশোনা করিনি। একবার আরবি শেখার সাত দিনের একটা কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। টাকা পয়সা সব দিছি।
চারদিনের মাথায় আমি যখন হরফ শেখা শুরু করেছি, আমার সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখন বাথরুমে, ওয়ালে আকাবাঁকা আরবি হরফ দেখা শুরু করেছি। গাছের দিকে তাকালে মনে হতো গাছে গাছে পাতায় পাতায় আরবি হরফ। মানসিকভাবে আমার সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তারপর আরেকটা কারণ ছিল ব্যবসায়িক কারণে পারিনি।
সাবকন্ট্রাক্টরি কাজ করতাম। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের যে উদ্বেধনী হয়েছিল সে সময় বাইরের, ভিতরের টাইলসের কাজ। বঙ্গবন্ধুর ছবি সবগুলোর কাজ করেছিলাম। আল্লাহ সুবহানাহুর কৃপায় সাবকন্ট্রাক্টে কাজ করিয়েছিলাম। আমার সাবকন্ট্রাক্টরির বিজনেস ছিল। আমার লোকজন তাদের কাজের ইউনিফর্ম পরে কাজ করতো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিলাম। নট শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, নট শেখ হাসিনা। কথাটা বুঝছেন?
শেখ হাসিনাতো এখন অসহায় লোক। চতুর্দিকে তার শয়তান। তার কাছের লোকও শয়তান। সমস্যা তো এটা। সে তো একলা। একা কী করবে। আল্লাহর শুকরিয়া সে খুব ভালো কাজ করছে। আল্লাহ আছেন বিধায় ভালো কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। আশে-পাশে যে চোর-চোট্টা। ঐ যে, কালো বিড়াল, সাদা বিড়াল, অমুক বিড়াল, তমুক বিড়াল!
শেখ হাসিনাসহ পুরা বাংলাদেশকে কালারিং করার জন্য আইসের নামে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। একটা অপশক্তি আমাদের দেশের ওপর থাবা বসাইতে চাইছে। এখন সেই থাবা বসানোর জন্য এ ধরনের নাটক সাজাচ্ছে। তবে শোলাকিয়া, গুলশানের হামলায় ইন্ধন আছে। কারো ব্যক্তি উদ্যোগে এ হামলগুলো হয়নি। আর এর সাথে বাইরের শক্তি আছে বলে আমি মনে করি। নাইলে এটা সম্ভব না।
আল্লাহ লিখে যাচ্ছি, কেউ যদি চিনতে পারে এটা আল্লাহ সুবহানাহুর নাম। এটাই আমার স্বার্থকতা। সে যে ধর্মেরই হোক না কেনো। আল্লাহ নাম মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য লিখে যাচ্ছি। এই আমি লিখে যাচ্ছি এখানে শুধু মোসলমানরা আসেন না। যারা মোসলমান না তারাও আসেন। এ উদ্যানের প্রায় প্রতিটি গাছে আল্লাহু লেখা আছে। তারা আল্লাহর নাম দেখার সুযোগ পাচ্ছে। আর যে ঈমানদার মোসলমান এ আল্লাহু লেখা দেখার পর অবশ্যই তার মনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের স্মরণ আসবে। আমি এ উদ্দেশ্যে এ কাজটি করে যাচ্ছি।
আল্লাহ যার জন্য হবে তার পথ আল্লাহ তায়ালা ঠিক করে দিবেন। এক সময় নামাজ পড়তাম। এখন পড়ি না। নামাজ নামাজই। সর্বোচ্চ ইবাদত। ফরজের মধ্যে অন্যতম উত্তম হলো নামাজ। তাবলিগে যাওয়ার পরে দাড়ি রেখেছি। দাড়ি ছাড়া আমার ছবি দেখলে আপনি যে কোনো হিন্দি সিনেমার কোনো নায়ক বা ভিলেন বলে চালিয়ে দিতে পারবেন।
যাক সে কথা। নামাজে যাইতাম। কেউ কয় (নিয়ত করে বুকে হাত বাঁধা) এখানে হবে না নিচে নামাও (নাভির ওপর)। আচ্চা নামাইলাম। আরেক জায়গায় গেলাম, বলে ওখানে হবে না (নিয়ত করে নাভির উপর হাত বাঁধা) উপরে (নিয়ত করে বুকে হাত বাঁধা) উঠাও। কেউ কয় পা ফাঁক করো, কেউ কয় সোজা করো। আর কেউ বলে সেজদা দেয়ার আগে হাত তোলো। এভাবে হবে না। এ হবে না এটা হবে। বাবা কোনটা করবো। যা নামাজই পড়লাম না!
আল্লাহ একটা। ইবাদত হবে একধরনের। কোনো দু’রকম হবে না। দু’রকম যদি হয় আমি আমার মতো ইবাদত করবো। আমার জিহ্বায় আল্লাহর স্মরণ অছে বিধায় লিখতে পারছি। এটাই আমার কাছে ইবাদত।
ব্যক্তি জীবনে বিহাহিত আসাদুজ্জামান এক সন্তানের জনক। সন্তান থাকে তার দাদার বাড়ি। বউ থাকে তার বাবার বাড়ি।
লেখার ব্যাপারটা শুরু হয়েছে, একবার পঞ্চগড়ে গিয়েছিলাম ব্যবসায়িক কাজে। সেখানে গিয়ে অবরুদ্ধ হই। টানা আট দিন আমাকে অবরুদ্ধ থাকতে হয়। কারণ ছিল টাকা পয়সা। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার পরোক্ষ ক্ষমতায় আমাকে উদ্ধার করে। সব টাকা মেরে দিতে পারেনি। বেশিরভাগ টাকা পেয়েছিলাম।
তারপর পাশের এলাকার এক গোরস্থানে ৪০ দিন কাটাই আমি। এখান থেকে বের হয়ে পাশেই বিশাল একটা বটগাছ ছিল। বটগাছে দেখলাম কে জানি সামান্য নখের আঁচড়ে আল্লাহু লিখে রেখেছে। এটা আমাকে খুব স্পর্শ করলো। আমারও মনে খেলে গেলো ছড়িয়ে দাও। সে থেকে লিখে যাচ্ছি।
যোগাযোগের জন্য কোনো মোবাইল নেই। ছিল বিক্রি করে দিয়েছি। মোবাইল থাকলে সমস্যা। বাড়ি থেকে ফোন, কোথায় কী আছি। এ সমস্য। সে সমস্যা। নানাবিধ ঝামেলা শুনতে হয়। এ কারণে বিক্রি করে দিয়েছি।