তীব্র জীবনযন্ত্রণা বহন করে চলেছেন ইউরো জয়ের নায়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৮:২২,অপরাহ্ন ১৬ জুলাই ২০১৬
জুবায়ের আহমেদ :
সপ্তাহ খানেকআগে স্তাদ দে ফ্রান্সে তাঁর গোলই পর্তুগালকে উপহার দিয়েছিল ইউরো কাপ। কিন্তু ২৮ বছরের এদেরজেও আন্তোনিও মাসেদো দে লোপেজ যে এক তীব্র জীবনযন্ত্রণা বহন করে চলেছেন
তার খবর অজানাই ছিল বিশ্বের সামনে! শুক্রবার ইংল্যান্ডের এক পত্রিকাকে দেওয়া বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে সেই কাহিনি প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন এদের। জানালেন, তাঁর সৎ মা-কে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগে তাঁর বাবা ফিলোমেনো আন্তোনিও লোপেজ গত ষোলো বছর ধরে জেল খাটছেন লন্ডনে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার যখন বারো বছর বয়স, তখন থেকে বাবা জেল খাটছেন। আমার সৎ মা মারা গিয়েছিলেন এবং সেই খুনে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। গত ষোলো বছর ধরে তিনি জেল খাটছেন।’’
সৎ মা ডমিঙ্গিয়াজ অলিভিয়াসকে খুন করার কারণ কী ছিল? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর, এদেরের বাবার সন্দেহ হয়েছিল যে, স্ত্রী ডমিঙ্গিয়াজ তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু তার পরিণতি যে এত নৃশংস হতে পারে, তা ছিল কল্পনাতীত। যে নরউইচ ক্রাউন আদালতে এই হত্যামামলার শুনানি হয়েছিল, সেই আদালতের বিচারক রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে ফিলোমেনো তাঁর স্ত্রীকে প্রথমে মাথায় গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের হুইল দিয়ে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করেছিলেন। পরে ফাঁস দিয়ে তাঁর শ্বাসরোধ করা হয়। ডমিঙ্গিয়াজের মৃত্যুর পর সেই দেহ নদীতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। বিচারকের মন্তব্য ছিল, ‘‘কোনও নিরীহ মহিলাকে যে এত নির্মমভাবে খুন করাও সম্ভব, তা ভাবাই যায় না।’’
ওই সাক্ষাৎকারে তাঁর জীবনের গোপন কাহিনি প্রকাশ করলেও এদের একবারের জন্য তাঁর বাবার নাম উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘২০০৮ সালে আমি পর্তুগালের অ্যাকাডেমিয়া ক্লাবে যোগ দিই। ফুটবল খেলে সেই আমার অর্থ উপার্জনের শুরু। তবে তারই মধ্যে ক্লাব থেকে ছুটি পেলে ইংল্যান্ডে চলে আসতাম জেলে বাবার সঙ্গে দেখা করতে।’’ আরও বলেছেন, ‘‘গায়না বিসাউ থেকে দু’বছর বয়সে আমি মা-র সঙ্গে পর্তুগালে চলে আসি। বাবা তখন সেখানেই থাকতেন। একদিন বাবা এসে আমাকে নিয়ে চলে গেলেন। আমাকে বোর্ডিং কলেজে ভর্তি করে দেওয়া হয়।’’
কিন্তু সেই অস্থির জীবনযাত্রা এদেরকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি। পর্তুগাল তারকা বলেছেন, ‘‘বারো বছর বয়সে পরিবার ছেড়ে নতুন জায়গায় থাকা সুখকর ছিল না। কিন্তু একজন ভাল মানুষ এবং ফুটবল কেরিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সেই জীবন খুব সাহায্য করেছিল।’’ গত বছর ফ্রান্সের লিল থেকে ইংল্যান্ডের সোয়ানসি সিটিতে লোনে আসার পর ক্লাবের ওয়েবসাইটে মজা করে ২৮ বছরের স্ট্রাইকার বলেছিলেন, ‘‘আমার পারিবারিক জীবনে যেভাবে বিভিন্ন ধারার সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটেছে, তাতে আমাকে অনায়াসে মিস্টার ইন্টারন্যাশানল বলা যেতে পারে। আমার এক বোন পড়াশোনা করে ইংল্যান্ডের উলভারহ্যাম্পটনে। আর এক বোন দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে লন্ডনে। আমার ভাই থাকে পর্তুগালে। সেভাবে দেখলে সর্বত্র আমার পরিবার ছড়িয়ে রয়েছে।’’ আর সেই ভ্রাম্যমাণ সংস্কৃতিই তাঁকে প্রেরণা জুগিয়েছে একজন সৎ মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠতে। এদেরের কথায়, ‘‘অনেক নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতাও বেড়েছে, যা আমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে