ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে অনাবাদি ২১ হাজার হেক্টর জমি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৬, ২:২৪ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নদী ও খাল খননের অভাবে ওসমানীনগরে ব্যাহত হচ্ছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন। রবি মৌসুমে পানি সংকট এবং আউশ ও রোপা আমন মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে প্রতি বছর প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমি অনাবদি পড়ে থাকছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার টন খাদ্যশষ্যের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ২০১২ সালে এই দুই উপজেলা ২৭ হাজার জমি অনাবাদি থাকলেও স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রচেষ্টায় ৩ বছরে ৬ হাজার হেক্টর জমি আবাদের পর্যায়ে এসেছে। এখনও যে দিকেই চোখ যায় শুধু অনাবাদি জমি চোখে পড়ে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদী-নালা ও ছোট-বড় খাল পুনঃখনন এবং রিজার্ভার নির্মাণ করে অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার মাধ্যমে এলাকার অনাবাদী জমিগুলোকে আবাদযোগ্য করে তোলা সম্ভব। কিন্তু এলাকার কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে খাল ও নদী খননের দাবি জানিয়ে এলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ওসমানীনগরের ৮টি ও বালাগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৩টি নদী, ৮৬টি হাওর, ৭৫৫০টি পুকুর, অসংখ্য ছোট-বড় খালবিল ও ৩টি গভীর নলকূপ পানির একমাত্র উৎস। ভূগর্ভস্থের পানির স্তর খুব গভীরে এবং আয়রনযুক্ত থাকায় অনেক ক্ষেত্রে তা সেচের অনুপযোগী। অধিকাংশ ইউনিয়ন নদী সীমার অনেক দূরে। কুশিয়ারা, বড়বাঘা ও বুড়ি নদীসহ শত শত ছোট-বড় খালবিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় রবি মৌসুমে দেখা দেয় মারাত্মক পানি সংকট।
আবার আউশ ও রোপা আমন মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের বাধার সৃষ্টি হওয়ায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে বছরের তিনটি মৌসুমে এই দুই উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকে। জমিগুলো চাষ করা সম্ভব হলে প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা যেত। এলাকার একমাত্র প্রবাহিত নদী কুশিয়ারা। রবি মৌসুমে এই প্রবাহিত নদীটি বিভিন্ন এলাকায় শুকিয়ে যায়। বড়বাঘা নদী মরে খালে পরিণত হয়েছে। বুড়ি নদীর কোনো অস্তিত্বই নেই। এসব নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী শতাধিক ছোট-বড় খাল একেবারে ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদী ও খালের জায়গা অনেকে দখলও করে নিয়েছে। যার ফলে রবি মৌসুমে এসব নদী ও খাল শুকিয়ে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট। যার কারণে রবি মৌসুমে দুই উপজেলার ৮৬ হাওরের মোট ফসলি জমির ৪০-৪৫ শতাংশ জমি অনাবাদি থেকে যায়। এ সময় ১৭ থেকে ১৮ হাজার হেক্টর জমি চাষ করা সম্ভব হলেও পানির অভাবে অনাবাদি থেকে যায় ১১ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর। রবি মৌসুমে অনাবাদি জমিগুলোকে চাষের আওতায় আনা গেলে প্রায় প্রায় ৪০ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হতো। আউশ ও রোপা আমন মৌসুমে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী ও খালগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ফসলি জমিগুলোতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এ দুটি মৌসুমে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়। যে জমিগুলো থেকে প্রায় ৫৬ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হতো।
তাজপুরের কৃষক দিলোয়ার মিয়া ও ফরিদ উল্লা বলেন, মরে গেছে বুড়ি বরাক নদী। তাজপুর ইউনিয়ন এলাকার লঙ্গুয়ার খাড়া, আমিদিন খাল, চাম্পাতলির খাল, শ্রীকৃষ্ণ খাল, ওইদর বিলসহ ছোট বড় অসংখ্য খাল ও নালা ভরাট হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে এগুলো খননের দাবি জানিয়ে এলেও কার্যত কোােন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ সময় খাল ও নদী খনন করা হলে এ এলাকার অনেক জমি আবাদের আওতায় আনা যেত। গোয়ালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বলেন, নাটকিলা খাল, গয়নাঘাট খাল, হুরফা খালি খাল, নাইয়া ধারা, বাঘর খাল, কালাসারা বিলসহ সব নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষিতে উৎপাদন কমে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, অনাবাদি জমি যাতে চাষের আওতায় আসে সে ব্যাপারে একটি করে ইউনিয়নকে নির্বাচন করে জমিগুলো আবাদের আনার কাজ চলছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী ইউপির কৃষকদের ও অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ সিলেটের বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, ইতিমধ্যে ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের বেশ কিছু অনাবাদি জমি চাষের আওতায় চলে এসেছে। অবশিষ্ট অনাবাদি জমি ও চাষের আওতায় আনার কাজ চলছে।