তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত ৯০, আটক দেড় হাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৬, ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
তুরস্কের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ বলছে রজব তাইয়েব এরদোয়ানের সরকার। তবে তা মানছেন না বিদ্রোহী সেনারা। সামরিক অভ্যুত্থানকে সফল করতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তারা। এদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আর ছবিতেও বিদ্রোহীদের তৎপরতা সচল থাকার আভাস মিলেছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মারমারিস থেকে ইস্তাম্বুলে ফিরতেই তার সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। সে সময় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় অংশ নেওয়া বিদ্রোহী সেনাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় তুরস্কের সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ হাজার মানুষ। আর আটককৃত বিদ্রোহীর সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি।
তবে আটক-গ্রেফতারের ভয়াবহতার পরও গোলাগুলির শব্দ ও বিভিন্ন ছবিতে এখনও বিদ্রোহীদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। সবমিলে শুক্রবার রাতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর এখন দেশটির নিয়ন্ত্রণ ঠিক কার হাতে রয়েছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
একদিকে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সমাপ্তি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়িব এরদোয়ান। অন্যদিকে ইস্তাম্বুল ও আনকারার মতো বড় বড় শহরগুলোতে এখনও গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকার অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ বলার পরে রয়টার্সে প্রকাশিত এক ছবিতে যুদ্ধ বিমান উড়ে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে ইমেইলে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকারীদের পাঠানো একটি বিবৃতির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অভ্যুত্থানপন্থী সেনা অংশটি এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে। ‘শান্তি পরিষদ’ নামের ওই অভ্যুত্থানপন্থী বাহিনী জনগণকে বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও বলছে, তুরস্কের বড় বড় শহরগুলো এখনও গুলির শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
তবে মিডিয়ার কাছে পাঠানো বিবৃতিতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর সরকারপন্থী অংশ দাবি করেছে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা ‘পুরোপুরিভাবে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে’। সেই গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা যেখানে আইনের শাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় থাকবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকারীরা এখনও বেশ কিছু সামরিক হেলিকপ্টার দখল করে রেখেছে। সেনা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাকারীদের নিয়ন্ত্রণাধীন উড়ন্ত বিমানগুলোকে ভূপাতিত করার নির্দেশ দিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম খবরটি নিশ্চিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে বিমান হামলায় অংশ নিয়েছে এফ-১৬ বিমান।
দেশটির এনটিভি টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, বেশ কিছু সেনা ইস্তাম্বুলের বসফরাস সেতুতে আত্মসমর্পণ করছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৭৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য।
শুক্রবার মধ্যরাতে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’দেশ চালাবে এবং কারফিউ ও সামরিক আইন জারি থাকবে।
একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে। কারফিউর বিরোধিতা করে এরদোয়ানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। অন্তত ৬০ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে প্রসিকিউটরের কার্যালয়। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। সূত্র: গার্ডিয়ান, সিএনএন