আইএস জঙ্গিদের গল্প পড়ানো হয় বাংলাদেশের যে স্কুলে !
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০১৬, ৭:৩৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ: জামায়াত নেতাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল অ্যান্ড কলেজটিতে জাতীয় সঙ্গীত বাজে না, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় নিজেদের মতো করে। এমনকি এই স্কুলের পাঠ্যক্রমে ইংরেজি বা আরবি শেখাতে গিয়ে তালেবান এবং আইএস যোদ্ধাদের গল্প ‘লেসন স্পিড’ হিসেবে পড়ানো হয়। সম্প্রতি বরিশালের পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
পিস টিভি এদেশেও খুব জনপ্রিয় হওয়ায় এর সুযোগ নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলটির নামের সঙ্গে মিল রেখে জামায়াত ঘরানার লোকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বরিশালে এর শাখা ক্যাম্পাস খোলা হয় মাত্র এক বছর আগে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করার সময় ঘোষণা দেওয়া হয় পিস টিভির উদ্যোক্তা ড. জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এটি পরিচালিত হবে। এ ঘোষণার কারণে অতি দ্রুত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর ৪৭ কলেজ অ্যাভিনিউয়ের জিমি কটেজ নামের ভবনটি ভাড়া নিয়ে চালানো হচ্ছে পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের কার্যক্রম। তবে নির্দিষ্ট লোকজনের বাইরে কাউকে এ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এছাড়া এ স্কুলে জাকির নায়েকের লেকচারের নির্বাচিত অংশ পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমনই লেখা থাকুক না কেন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা ভিন্নভাবে তা ব্যাখ্যা করে থাকেন। এ স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতও পরিবেশন করা হয় না।
‘জামায়াতি চিন্তাধারা প্রভাবিত পাঠ্যক্রম’ অনুসারে ইসলামি শিক্ষার নামে বিভিন্ন ‘জিহাদ’ বা যুদ্ধের চুম্বুকাংশ প্রায় প্রতিদিন শিশুদের শেখানো হয়। এছাড়া ভাষা হিসেবে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি শেখানো হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের ইংরেজি ও আরবি শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়। তার তুলনায় বাংলা ভাষা কম গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়। এমনকি ইংরেজি বা আরবি শেখাতে গিয়ে সাম্প্রতিক ইরাক, ইরান, সিরিয়া বা আফগানিস্তানে তালেবান এবং আইএসএস-এর যোদ্ধাদের গল্প ‘লেসন স্পিড’ হিসেবে পড়ানো হয়।
একাধিক অভিভাবক জানান, পিস স্কুলে লেখাপড়ার কৌশল ভিন্ন এবং এখানে অনেক কিছুই শেখানো হয়, যা স্বাভাবিক শিক্ষা নয়। তবে দুটি কারণে তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের সেখানে ভর্তি করিয়েছেন। এর মাধ্যমে আরবি ও ইংরেজি ভাষাটা রপ্ত করা যাচ্ছে এবং নৈতিক শিক্ষার পদ্ধতিটি ভালো বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুর নাহার আফরোজ জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো তাদের আওতাভুক্ত নয়। তারপরও কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এদিকে,একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বরিশালের এ স্কুলে ২১ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই জামায়াতের সমর্থক। যেখানে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানকার পাঠ্যক্রম অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের চেয়ে আলাদা। এমনকি বোর্ডের সঙ্গেও মেলে না। সরকার স্বীকৃত পাঠক্রম প্রচারণায় ব্যবহৃত হলেও মূলত প্রতিষ্ঠানটি ‘জামায়াতি চিন্তাধারা প্রভাবিত পাঠ্যক্রম’ অনুসারে পরিচালিত হয়।
জানা গেছে, এর আগে বরিশালের পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান ছিলেন জামায়াতি-মনোভাব প্রভাবিত সরকারি বিএম কলেজের গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোশারেফ হোসেন। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ জানতে পারায় শেষে বাধ্য হয়ে তিনি (মোশারেফ) পদত্যাগ করেন। তবে এখনও নেপথ্যে মোশারেফ হোসেনই বরিশালে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
বর্তমানে বরিশালের পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টির বরিশালের সদস্য এবং সচেতন নাগরিক কমিটি বা ‘সনাক’-এর বরিশাল শাখার সাবেক সভাপতি জামায়াত ঘরানার প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন। তার কাছে পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সম্পর্কে জানতে স্কুলে গিয়ে তাকে না পাওয়ায় ও মোবাইলফোনে কল করলে রিসিভ না করায় তার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সরকারি চাকরি নেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন আওয়ামী লীগের সুপারিশ দরকার, তেমনি এ স্কুলেও শিবির বা জামায়াতের সুপারিশ ছাড়া কিছুই হয় না।