সংবাদপত্র ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সব মানুষের কথাই বলবে : ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৬, ৯:০৫ অপরাহ্ণ
সংবাদপত্রের কাছে প্রথম চাওয়া অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ খবর এবং উপস্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ের যৌক্তিক ও যথার্থ বিশ্লেষণ। আমরা সবাই চাই, সংবাদপত্র ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সব মানুষের কথা বলবে। তাদের মতামত, আশা-আকাক্সক্ষা, চাওয়া-পাওয়ার কথা তুলে ধরবে। তবে আমি বিশেষভাবে যেটা প্রত্যাশা করি তা হলো সংবাদপত্র সমাজের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র সাধারণ মানুষের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিক। আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলো যে সাধারণ মানুষের কথা বলছে না, তা আমি বলছি না। আমি চাই আরো বেশি করে যেন গ্রামের গরিব মানুষের, পিছিয়ে পড়া মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, চাওয়া-পাওয়া এবং সংগ্রাম-সাফল্যের কথা সংবাদপত্রে উঠে আসে।
আরেকটা বিষয়ে আমি সংবাদপত্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমাদের দেশে এখন নানা কিছু উদ্ভাবন হচ্ছে। সেই উদ্ভাবনগুলো যে শুধু বৈজ্ঞানিক বা বিশেষজ্ঞরাই করছেন তা নয়, সাধারণ মানুষজনও তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন থেকে চমকপ্রদ নানা কিছু উদ্ভাবন করছেন, যা তাদের কাজকে সহজ করছে, কর্ম দক্ষতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেমন, আমি দেখেছি, গ্রামে যিনি মুরগি পালন করেন, তিনি অন্য শিকারি প্রাণিদের হাত থেকে নিজের মুরগি রক্ষায় নিজেই একটি পন্থা আবিষ্কার করে ফেলেছেন। মুরগির খাঁচায় মাত্র কয়েকটি বোতল ঝুলিয়ে রেখে তিনি সেসব উৎপাতকারী প্রাণিকে ভয় দেখিয়ে তফাতে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এ রকম গ্রামের মানুষজন নিজেদের প্রয়োজন থেকে অনেক কৌশল, অনেক যন্ত্রপাতি নিজেরাই উদ্ভাবন করে তার সফল ব্যবহার করছেন। আমি চাই সংবাদপত্র সাধারণ মানুষের এসব উদ্ভাবন, তাদের সাফল্য তুলে ধরুক যাতে অন্যরাও এই দৃষ্টান্ত দেখে উদ্ভাবনে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।
সংবাদপত্রের কাছে আমি আর যেটা চাই তা হলো- আমাদের এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে মূল চেতনা তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি যেটা বুঝি তা হলো- একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বৈষম্যমুক্ত সমাজ। আমাদের দেশে ধনী-দরিদ্র শ্রেণিভেদ রয়েছে। আয় এবং সম্পদের প্রকট বৈষম্য রয়েছে। সমাজে একটা অংশ আছে একেবারে অতি দরিদ্র। আমি বলছি না যে বৈষম্য থাকবে না, একেবারে লুপ্ত হয়ে যাবে, তবে আমরা যেটা চাই তা হলো একটা সহনীয় সমাজ। সেখানে প্রত্যেকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। সংবাদপত্রের কাজ হবে এই কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, যারা এই কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন তাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা।