সিলেট কারাগারে যত ফাঁসি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৬, ৫:১৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ
মিশেল ফুকো বলেছিলেন- কারাগার হলো ক্ষমতার দাসত্ব অভ্যাস করানোর জায়গা। আর আমাদের আইন বলে- কারাগার হলো শোধনাগার। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তির আত্ম সমালোচনা ও আত্নোপলোব্দি ঘটানোর স্থান। কারাগার যদি শোধনাগারই হয় তাহলে সেখানে ফাঁসি হবে কেন? ফাঁসির পর তো আর শোধন হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না!
ফলে ফাঁসি থাকবে কী থাকবে না এ নিয়ে বিতর্ক চলছে বিশ্বজুড়ে। মানবাধিক সংগঠনগুলো এ প্রশ্ন তুলেছে জোড়েসুড়েই। অনেক দেশই ফাঁসির বিধানকে শিথিল করেছে।
তবে বাংলাদেশে ‘এনকাউন্টার’ আর ‘ক্রসফায়ার’ই নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে ওঠেছে। সে তুলনায় ফাঁসি তো কিছুটা মানবিকই বটে! বিচারের মাধ্যমে শাস্তি হলো। তাই ফাঁসি হচ্ছেই। প্রাণ হরণের শাস্তি স্বরুপ কেড়ে নেওয়া হয় হন্তারকের প্রাণ।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি হলো মাকু রবি দাস নামের এক খুনের আসামীর। ২০০১ সালের ৩১ অক্টোবর রাতে মাত্র ২ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতিবেশী নাইনকা রবিদাসকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দারাগাওয়ের মাকু রবিদাস। এই হত্যা মামলায় দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার রাত ১২ টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হয় মাকু রবিদাসের।
এরআগে ২০১১ সালের ৩ মার্চ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রবি মুণ্ডা ওরফে মোঃ বিল্লাল (৬০) নামে দ প্রাপ্ত এক আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়। রবি মুন্ডাও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। ওই উপজেলার নালুয়া চা বাগানের ধর্মনাথ লাইনের মৃত অমর সিং মুণ্ডার ছেলে ছিলেন রবি।
তারও আগে ২০১০ সালের গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। স্বাধীনতার পর সিলেট কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের প্রথম ঘটনা ছিলো সেটি।
২০১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের প্রথম প্রহরে সিলেট কারাগারে সাবুল মিয়া ও আলম উদ্দিন স্বপন নামক দু’ইখুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পৃথক দুইটি মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সাবুল মিয়া ও আলম উদ্দিন স্বপন যথাক্রমে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রেংগা দাউদপুর গ্রামের সোনা উল্যা এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার মিরার পাতন গ্রামের ছাদ উদ্দিনের পুত্র। সিলেট ও মৌলভীবাজার আদালতের দুই বিচারক ২০০৩ সালে তাদেরকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
এর মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার রেংগাদাউদপুর গ্রামের সাবুল মিয়া তার প্রতিবেশী জনৈক মুক্তাদির আলীকে ২০০০ সালের ১২ নভেম্বর কুড়াল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। একই বছরের ১ ডিসেম্বর যৌতুকের দাবীকৃত টাকা না পেয়ে মৌলবাজারের বড়লেখা থানার মিরার পাতন গ্রামের আলম উদ্দিন স্বপন তার স্ত্রী খোদেজা বিবি কমলাকে গলা টিপে হত্যা করে।
স্বাধীনতার পর এই জোড়া ফাঁসিই সিলেট কারাগারে প্রথম ফাঁসির ঘটনা হলেও এই কারাগারে তারআগে ফাঁসি কার্যকরের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৩৭ সালে সিলেট কারাগারে স্বামী হত্যার দায়ে করিমুন্নেসা নামক এক মহিলার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তারও তিন বছর আগে ব্রিটিশ বিরোধী এক বিপ্লবী রাজনীতিকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সিলেট কারাগারে। ১৯৩৪ সালের ২ জুলাই ফাঁসি দেওয়া হয় বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মী অসিত ভট্টাচার্যকে। অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয় তাকে।
তবে এ দুটি ঘটনাই ব্রিটিশ শাসনামলের। পাকিস্তান আমলে সিলেট কারাগারে কোন ফাঁসি কার্যকর হয় নি। যদিও এ সময়সীমার মধ্যে দু’শতাধিক আসামির ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছিল সিলেট দায়রা ও জজ আদালত থেকে।
মঙ্গলবার রাতে সিলেট কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হওয়া মাকু রবিদাস হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দারাগাওয়ের সমাধনী রবিদাসের ছেলে।
২০০৩ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত নাইনকা রবিদাস হত্যা মামলায় (দায়রা ৫৭/২০০২) মাকু রবিদাসকে মত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
পরবর্তীতে মাকু রবিদাস আপিল (জেল পিটিশন নং-০৩/২০০৭) করলেও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানালে তাও নামঞ্জুর হয়।
গত ১২ মে কারা অধিদফতরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফাঁসি কার্যকরের আদেশ দিলেও পবিত্র রমজান মাস থাকায় তা কার্যকর করা যায়নি।