চন্দ্রশেখর প্রসাদ
১৯৯৭ সালের ৩১ মার্চ বিহারের সিওয়ানে খুন হন ছাত্রনেতা চন্দ্রশেখর প্রসাদ।এই হত্যাকাণ্ডে নামও জড়িয়েছিল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদ মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে ছিলেন চন্দ্রশেখর। মেধার জোরে সুযোগ পেয়েছিলেন ঝুমরি তালাইয়ার সেনা স্কুলে। পরে যোগ দিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু, রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যান চন্দ্রেশেখর। সেখান থেকে দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান।
এখানেই, নকশাল ভাবাদর্শে তৈরি রাজনৈতিক সংগঠন সিপিআইএম:এল:এর আইসার সভ্য হয়ে যান। পরপর তিনবার জেএনইউ:এর জেনারেল সেক্রেটারিও নির্বাচিত হয়েছিলেন চন্দ্রশেখর।
তার খুনের পিছনে আসল মদতদাতারা কে ছিলেন তা আজও খুঁজে বের করতে পারেনি বিহার পুলিশ। তবে, জানা যায় চন্দ্রেশেখরের নায়কোচিত উত্থানই তার হত্যার মূল কারণ। চন্দ্রশেখরের হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়ও উঠেছিল।
রাজীব দীক্ষিত
সমাজকর্মী এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন। কিন্তু, তার মৃত্যু আজও এক রহস্যে ঘেরা। চিকিৎসকদের সার্টিফিকেটে রাজীবের মৃত্যুকে হৃদরোগ বলা হলেও বহুজনের দাবি, ‘স্লো পয়জন’ করে খুন করা হয়েছিল।
৩০ নভেম্বর, ২০১০ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল রাজীবের। বিশ্বায়নের কুফল থেকে শুরু করে ‘লিবারালাইজেশন’ এবং বেসরকারিকরণের বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন রাজীব। ‘স্বদেশি মুভমেন্ট’ এবং ‘আজাদি বাঁচাও’নামে দুটি মুভমেন্টের জন্মও দিয়েছিলেন তিনি। কর ব্যবস্থার কেন্দ্রীয়কতার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন রাজীব। বলতে গেলে একাধিক বিতর্কের নাম ছিলেন রাজীব।
২০১০ সালে ভিলাইয়ে একটি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। সেসময় মৃত্যু হয়। আশ্চর্যের বিষয় রাজীবের দেহের কোনও ময়নাতদন্ত হয়নি। এমনকী, মৃত্যুর পর রাজীবের দেহ পুরো নীল হয়ে গিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমও নিশ্চুপ ছিল এই রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী
তাসখন্দ সফরে মৃত্যু হয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর। তার মৃত্যু আজও রহস্যে মোড়া। বলা হয়েছিল লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর ময়না তদন্তের রিপোর্ট কখনই সামনে আনা হয়নি।
তবে, জর্জ কাউলি নামে এক সাংবাদিক তার অন্তর্তদন্তমূলক একটি বইয়ে দাবি করেছিলেন ভারতের প্রথম পরমাণু বিজ্ঞানী হোমি ভাবাকে যে ভাবে পয়জনিং করে হত্যা করা হয়েছিল লাল বাহাদুরকেও সেভাবে খুন করা হয়েছিল। কারণ, হোমি ভাবার মতোই লাল বাহাদুরও ভারতের পরমাণু পরীক্ষা:নিরিক্ষা এগিয়ে নিয়ে যেতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিলেন। হোমি ভাবা এবং লাল বাহাদুরের মৃত্যুর পিছনে সিআইএ:এর হাত ছিল বলেও দাবি করেছিলেন কাউলি।
সুনন্দা পুষ্কর
ধনি, সুন্দরী, রাজধানীর রাজনৈতিক মহলের বিখ্যাত সোশালাইট, ডিভোর্সী এবং পরবর্তীকালে ইউপিএ ২-এর জামানার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুরের স্ত্রী। এহেন সুনন্দা পুষ্করের দেহ উদ্ধার হয়েছিল হোটেলের ঘর থেকে। এই মৃত্যু নিয়ে আজও রহস্যের সমাধান হয়নি। প্রথমে বলা হয়েছিল মাদকের নেশা আর ঘুমের বড়ি খেয়ে নার্ভ ফেল করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। পরে বলা হয়েছিল, ড্রাগ ওভারডোজে মৃত্যু। কিন্তু, কোনও যুক্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ পুলিশ একেক সময় এক যুক্তি খাড়া করেছিল এই মৃত্যু নিয়ে।
সুনন্দার মৃত্যুতে সন্দেহের নিশানায় পড়েন স্বামী শশী। বলা হয় শশীর জীবনের নতুন নারীকে ঘিরে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল এবং তার জেরে হোটেলের ঘরে হাতাহাতি থেকে মৃত্যু। কিন্তু, এই যুক্তিও টেকেনি।
বিজেপি রাজধানীর দিল্লির মসনদে বসতেই সুনন্দার মৃত্যুকে খুন বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের তত্বকে সামনে রেখে তদন্ত করছে। ইতিমধ্যেই একাধিকবার জেরা করা হয়েছে শশী থারুরকে।
আরুষি তালোয়ার হত্যাকাণ্ড
নয়ডায় নিজের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল আরুষির গলাকাটা দেহ। ২০০৮ সালের ১৬ মে ঘটনার দিন আরুষির বয়স ছিল ১৪ বছর। এরপর আরুষির বাড়ির পরিচারক হেমরাজের দেহ মেলে ছাদের উপরে। কী জন্য এই দুই খুন আজও সেই রহস্যের পর্দা ওঠেনি।
প্রাথমিক তদন্তে উত্তর প্রদেশ পুলিশের বড়রকমের গাফিলতিতে বহু প্রমাণ তখন নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ দাবি করে, হেমরাজের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল আরুষির। যা মেনে নিতে পারেননি আরুষির ডাক্তার বাবা-মা। তাই তারা মেয়ের অনার কিলিং করেছে। সিবিআই তদন্তের ভার নিয়ে অন্য কথা বলে এবং আরুষির বাবা-মাকে ক্লিনচিট দেয়। কিন্তু, আচমকাই সিবিআই-এর অন্দর থেকে তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে অন্য অফিসারকে নিয়োগ করা হয়। তিনি আবার তদন্তে আরুষির খুনে বাবা-মাকেই দায়ী করেন। এখনও শেষ হয়নি আরুষির খুনের তদন্ত।
রিজওয়ানুর রহমান
২০০৭ এর সেপ্টেম্বরে কলকাতার শিয়ালদহ শাখার পাতিপুকুরে রেললাইন থেকে উদ্ধার হয়েছিল পার্ক সার্কাসের ছেলে রিজওয়ানুর রহমানের দেহ। প্রাথমিক তদন্তে দাবি ছিল ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল তার। কিন্তু, রিজওয়ানুরের মা কিসওয়ার অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে দিনের পর দিন খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল এবং ছেলে ও ছেলের বউকে লালবাজারে ডেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশের বড় কর্তারা হুমকি দিয়েছিলেন।
রিজওয়ানুরের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজপথে নেমে পড়েছিল কলকাতার নাগরিক সমাজ। মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার সেন্টারের প্রশিক্ষক রিজওয়ানুর যাকে বিয়ে করেছলেন সেই প্রিয়াঙ্কা টোডি ছিলেন শহরের বড় ব্যবসায়ী অশোক টোডির মেয়ে। নানা ভাবেই এই বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করিছেলেন মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী অশোক টোডি। নানাভাবে হুমকিও দিয়েছিলেন। আপাতত রিজওয়ানুরের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে আদালতে রিপোর্ট জমা করা হলেও প্রকৃত রহস্যের পর্দা ওঠেনি বলেই মনে করেন বহু মানুষ।