বিএনপির নষ্ট রাজনীতির কারনে আজ আমি বিপর্যস্ত: মানিক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুন ২০১৬, ১:২৭ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির দুঃসময়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েও তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। অথচ যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলে, তাদেরই একজনকে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছে। তিনি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু দল করেও ধানের শিষ প্রতীক না পাওয়ায় বেদনাহত হয়েছেন। এমনকি পরিবারেও বিএনপির রাজনীতি করে কী পেলেন-এমন প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছেন। তাই তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করলেন।
লিখিত বক্তব্যে আতাউর রহমান মানিক বলেন, আমি এবার সহ পরপর দুই বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনগনের ভালোবাসায় নির্বাচিত হয়েছি। আমার প্রতি জনগনের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ ও অভিভুত। এজন্য আমি আমার জনগনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই রাজনীতির কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক ক্ষতিরমুখে পড়েছি। ২০১৪ সালে ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই। ওই সময় আমি কাউন্সিলে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে বিএনপির দায়িত্ব পালন করি। এরপরও থেকে ওসমানীনগরে বিএনপির আরও বিস্তৃতি হয়েছে। এবং বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। আমি একটি কথা বলতে চাই, আমি নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক হওয়ার পর থেকে ওসমানীনগর বিএনপির সব অংশের নেতাকর্মীদের সুখে দু:খে কাজ করেছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমি বিএনপির নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক হলেও গেলো ইউনিয়ন নির্বাচনে আমাকে গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন নির্বাচন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আর দলীয় এ সিদ্বান্তের কারণে আমি শুধু হতবাক হয়নি, মর্মাহত হয়েছি। আমার সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীরাও চমকে উঠেছেন। আর বিএনপির একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক না পাওয়া আমার জন্য ছিল দু:খজনক। দলীয় প্রতীক না পেলেও আমি একজন নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আমি ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হই। ওই নির্বাচনে আমার এলাকার মানুষের ভালোবাসায় তাদের সেবা করার সুযোগ পাই। এরপর থেকে আমি নিরলসভাবে মানুষের জন্যই কাজ করছি। এবার নির্বাচনে দলীয় মনোয়ন না পেলেও আমি স্বতন্ত্র হিসেবে জনগণের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হই। এ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয় জনধিক্কিত বিএনপি নেতা সৈয়দ কওছর আহমদকে। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কওছর আহমদের মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আমি ৪ হাজার ৮১২ ভোট পেয়ে আমি নির্বাচিত হই। সেখানে কওছর আহমদ দলীয় প্রতীক নিয়েই পেয়েছে ১৪৪৫ ভোট।
আতাউর রহমান মানিক বলেন, বিএনপির রাজনীতি করার কারনে আমি বিনাদোষে ওসমানীনগরের ওসি হত্যা মামলার আসামি হয়েছি। সবাই জানে ওসি হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও তাই এসেছে। শুধু হত্যাই নয়, কেবল মাত্র বিএনপির রাজনীতি করার কারণে আমি সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আপোষ রাজনীতি না করার কারনে এমনটি হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত ও লিয়াজো করে নিজেদের রক্ষা করে চলেছেন। এই নষ্ট রাজনীতির কারনে আজ আমি বিপর্যস্ত। পদে পদে আক্রান্তের শিকার হয়েছি। কিন্তু দলের সিলেট কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো সহানুভূতি পেলাম না। উল্টো আমাকে দল থেকে মুল্যায়ন করা হয়নি। আমি একজন কর্মী হিসেবে ধানের শীষ না পাওয়াটা কতটুকু কষ্টের বলে বোঝাতে পারবো না। বিএনপির রাজনীতি করে আমি কী পেলাম সেই প্রশ্ন এখন সর্বত্রই। পরিবারের কাছেও আমি প্রশ্নের মুখোমুখি। এ কারনে আমি এখন বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাড়ানোর সিদ্বান্ত নিয়েছি। আমি আজ থেকে ওসমানীনগর থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক পদ সহ সকল সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।