বালাগঞ্জ উপজেলায় কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০১৬, ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বালাগঞ্জ উপজেলায় সরকারি কোন কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না-থাকায় গড়ে ওঠছে না দক্ষ জনশক্তি। তাছাড়া উপজেলার আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কারিগরী শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত বলে বিজ্ঞাপন প্রচার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসলেও সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই উপজেলা থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় পাশ করা কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া শেষ করেও বেকার রয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় কারিগরী জ্ঞানের স্বনির্ভর কোন প্রকল্প হাতে নিতে পারছে না। ফলে ক্রমেই বেড়েই চলছে শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠির সংখ্যা। সেই সাথে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’ সুলভ অপরাধ কর্মকাণ্ড।
বেসরকারি উদ্যোগে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার হিড়িক লক্ষ্য করা গেলেও কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও এতে সাধারণ জনগোষ্ঠি এতে ব্যাপক উপকৃত হবেন বলে শিক্ষিত মহল এমন মতামত দিয়েছেন।
উপজেলায় মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে শিক্ষিত যুবকরা নিজেরাই কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবেন বলে সচেতনমহল মনে করছেন। তাই এখানকার জনগণ সবসময় কারিগরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সুদীর্ঘ অতীত থেকে দাবি জানিয়ে আসলেও সে দাবি এখনও উপেক্ষিত রয়ে গেছে। ফলে এই উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে কারিগরী জ্ঞান প্রসার সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। কোনটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান সেটি সহজেই কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের ওয়েব সাইট থেকে ধারণা পাওয়া যায়। তাছাড়া কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে জেলা সদরে অবস্থিত ভোকেশনাল স্কুল এবং পলিটেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এরকম শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আয়োজন না করলে বুঝতে হবে এই প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাফিলিয়েটেড’ নয়।
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রতি বছর পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ২০ভাগ শিক্ষার্থী পরবর্তী উচ্চতর শ্রেণিতে পড়ালেখা শুরু করতে পারছে না। এদের অধিকাংশই দারিদ্রতা, যোগাযোগ সমস্যা ও পারিপার্শ্বিক কারণে মধ্য পথে ঝরে পড়ছে। এদের মধ্যে আবার মেয়েদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ঝরে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীরা কারিগরী শিক্ষায় নিজেদের কর্মক্ষমতা অর্জন করতে না-পারায় তারা পরিবার তথা দেশের বোঝা হয়ে পড়ছেন। একই সাথে ঝরে পড়ার হার প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত এসব জনগোষ্ঠি সরকারি-বেসরকারি চাকুরি লাভে ব্যর্থ হয়ে বেকারত্বের হতাশায় মুষড়ে পড়ছেন। অথচ কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেরাই আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারতেন। এতে বেকারত্ব হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক দারিদ্র্যতা কমে আসতে পারে।
প্রবাসী অধ্যুষিত এ অঞ্চলের এসব প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি বিদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল করতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবেন। এ ধরনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সরকার, জনপ্রতিনিধি, প্রবাসীসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন সমাজের সচেতন মহল।