সিলেটে রিকশাভাড়ার তালিকা চালক-যাত্রী মুখোমুখি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০১৬, ৬:২৭ অপরাহ্ণ
চৌধুরী মুমতাজ আহমদ, সিলেট থেকেঃ
প্রচণ্ড গরম, সারাদিনের উপবাস-রমজানে তাই একটুতেই অনেকের মেজাজ চরমে উঠে যায়। সেই মেজাজের ‘মিটার’কে আরো ঊর্ধ্বমুখী করে তোলার পথ তৈরি করে দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ক’দিন আগে তারা নগরবাসীকে ‘উপহার’ দিয়েছে রিকশাভাড়ার তালিকা। কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়া তালিকাটি ঝুলিয়ে দেয়ায় এর সূত্র ধরে রিকশা আরোহী ও চালকদের মধ্যে নিয়মিতই বচসা হচ্ছে। এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ভাড়ার তালিকা সংবলিত বোর্ড টানিয়েই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব খালাস। কিন্তু ভাড়ার এ তালিকা মানছেনই না রিকশাচালকরা। ফলে প্রতিদিনই সিলেটের পথে পথে ভাড়া নিয়ে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে নগর এলাকায় রিকশা ভাড়া নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে করপোরেশন। জেলা প্রশাসন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, রিকশা মালিক সমিতি সিটি, সাংবাদিকসহ সহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিত্বে তৈরি কমিটি রিকশাভাড়া নির্ধারণে বেশ কয়েকটি সভা করে। ঐ বছরের ২রা জুন কমিটি একটি তালিকা তৈরি করে জমা দেয় সিটি করপোরেশনে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় সে তালিকার অনুমোদনও দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন সে তালিকা টানানো সম্ভব হয়নি। তালিকা অনুমোদনের প্রায় দেড় বছর পর গত মাসের শেষের দিকে নগরীতে ভাড়ার তালিকা সংবলিত বোর্ড টানানোর উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।
কোর্ট পয়েন্টকে কেন্দ্র ধরেই সিলেট সিটি করপোরেশন বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করেছে। এর বাইরে এক কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। আর তিন কিলোমিটার বা এর বেশি দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ৭ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করে সিটি করপোরেশন। আর ঘণ্টার হিসেবে প্রতি ঘণ্টা ভাড়া ঠিক করে দেয়া হয়েছে ৫০ টাকা। সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করে দেয়া ভাড়ার কোনোটিই মানছেন না রিকশা চালকরা। তারা ভাড়া নিচ্ছেন নিজেদের মতো করেই। ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে চালকদের হিসাব হচ্ছে মোড়ভিত্তিক। সময় বা দূরত্বের কোনো ধারই তারা ধারতে চান না। একটি মোড় ছুঁলেই আরোহীকে বাড়তি ১০ টাকা করে দিতে হয়। রিকশাচালকদের হিসেবে খুচরো এমনকি পাঁচ টাকারও জায়গা নেই, ভাড়ার হিসাব বাড়ে প্রতি মোড়ে দশ-দশ করে। সিটি করপোরেশনের হিসেবে ১ কিলোমিটার পথের ভাড়া ১০ টাকা হলেও পথে যদি তিনটি মোড় ছুঁতে হয় তাহলে রিকশাচালকরা আরোহীর কাছে ৩০ টাকা দাবি করেন। আবার সিটি করপোরেশনের ভাড়ার তালিকায় কোর্ট পয়েন্ট থেকে টিলাগড়ের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। কিন্তু ৫০ টাকার কমে যাওয়ার উপায় নেই আরোহীর। কারণ সেই একই, মোড়ের হিসাব। কারণ পথে অন্তত ৫টি মোড় ছুঁতে হবে। তবে আরোহী যদি একজনের বেশি হন সেক্ষেত্রে অবশ্য এমন হিসাবও খাটে না। আরো বাড়তি টাকা চান তখন রিকশাওয়ালারা। এর বাইরেও আছে নানা শর্ত, রোদ বা বৃষ্টির সময় রিকশা চড়তে হলে আরোহীকে গুনতে হয় আরো বাড়তি কিছু টাকা, পথে মিনিট খানেকের জন্য থামলেও ‘জরিমানা’ দিতে হয়।
ভাড়ার তালিকা করে দিলেও তা কি করে কার্যকর হবে সে ব্যাপারে কোনো গা নেই সিলেট সিটি করপোরেশনের। কথা হয় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবের সঙ্গে। বললেন, বাজার ও দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে করপোরেশন একটা তালিকা করে দিয়েছে। এটা মানতে কাউকে বাধ্য করার দায়িত্ব আমাদের নেই। ন্যায্য ভাড়ার তালিকা থাকায় চালক ও আরোহীর মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয়টি আরো সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন।