অতলস্পর্শী ভালোবাসার দিন…
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ৪:৫১ অপরাহ্ণ
সাহেল আহমেদ :
১৪ই ডিসেম্বর। দেশে ছুটি থাকলেও ভিনদেশে কর্মের আসর ! তারিখ কিংবা ছুটি সবার কাছে যেনতেন হলেও দিনটি আমার কাছে অতলস্পর্শী ভালোবাসার। বসুন্ধরায় আগমনের দিনটি উচ্ছাসের হলেও আছে চিন্তার। তিরিশ ছুঁয়ে গেলেই তো জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ শেষ ! জন্মদিনে গহীন অন্তর উচ্ছ্বসিত থাকলেও মাথা চক্কর দেয়, পার করে ফেলা পোয়া শতাব্দীর হিসেব। জীবন খাতায় ক্ষুদ্র আমিতে জন্মভূমিকে কিইবা দিলাম ?
অন্তর্দাহ বাড়িয়ে লাভ নেই, লিখতে বসেছি তো পরবাসে কাজের ফাঁকে ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার দিনকে ঘিরে। গতকালকের জন্মদিনটি অনাড়ম্বর না হলেও ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসার। পরবাসে কর্মস্থলে স্বদেশি-বিদেশী সহকর্মী আর অনুজদের ভালোবাসা আপ্লূত করেছে। অক্ষরের পর অক্ষর আর শব্দের পর শব্দ বসিয়ে আবেগ প্রকাশটা যথেষ্ট নয়।
প্রাণ উজাড় করা ভালোবাসায় ভাবলেশহীন জন্মদিনটি রাঙিয়ে তোলার কারিগর অদ্বিতী বর্ণা। এমন দিনে মুগ্ধতার পিদিমটি তো দিদি বলে ডাকা এই মানুষটাই জ্বালিয়েছেন। এবারের জন্মদিনে দেশী-ভিনদেশী ভালোবাসাটাই আমার বিশেষ প্রাপ্তি।
দিনটি ছিল প্রবাসে হাজারো সীমাবদ্ধতা ও কাজের ফাঁকে একঝলক মুক্ত আলোতে বিচরণ। দিদির আলো ঝলমলে হারিকেন আর সহকর্মীদের কালিতে ভরা প্রতিটি শব্দ আমায় লেপ্টে রাখ। এমন দিন দেয়ার জন্য অফুরান ভালোবাসা আমার কর্মস্থলের সহকর্মীদের। মধ্য রাতে ঘরে ফেরা আবার মধ্য দুপুরে কাজে যাওয়ার মাঝখানের বিরতিতে এমন আয়োজন ধানমণ্ডি লেকে বসে গিটারে তোলা গানের মতোই অনুভবের। জন্মদিনে পুরাণ ঢাকায় নিয়ে আমার টাকা হাতিয়ে নেয়া বন্ধুরা যখন কাচ্চি বিরিয়ানীর সাথে লাবানের স্বাদ নেয়, কাওরান বাজারে প্রথম আলো কিংবা আরটিভির গলিতে বিকেলের আড্ডায় বড় ভাই-আপুরা যখন জন্মের একগাদা কথা শোনায়, মধ্যরাতে লালঘোড়ায় চড়ে হাতিরঝিল কিংবা মাওয়াতে রোমাঞ্চকর সময় যায় ! তখন প্রবাসে এক চিলতে সময় বের করে এমন ভাবনা আসাটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আজি এই জন্মদিনে দূরত্বের অনুভব অন্তরে নিবিড় হয়ে এল” পঙক্তির মতো মিলে যায়।
ভাঙ্গা ঘুম আর ক্লান্তি নিয়ে মধ্যরাতে নীড়ে ফেরা মন কেমন জানি চনমন করছে। যান্ত্রিকতা লিখতে না দিলেও এমন দিন নিয়ে না লেখাটাও পাপের ! তাই তো ঘুম ঘুম চোখে স্নিগ্ধ ভোরে লিখতে বসে সপ্তাহ, মাস, বছর গড়িয়ে যাওয়া জন্মদিনের হিসেব কষে যাচ্ছি। প্রচণ্ড আশাবাদী আমি যে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাই সবার মণিকোঠায়। ক্ষুদ্র আমি যেন সাদাকালো মলাটে আবারও মন খুলে বলতে পারি। জীবনের আনন্দ, বিষাদ কিংবা প্রাপ্তিতে যারা আছেন তাঁদের অতলস্পর্শী শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
সরাসরি, ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, কল করে যারা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কর্মযজ্ঞে আঁটকে থাকা আমি সবার প্রতিউত্তর দিতে পারিনি বলে লজ্জিত। যারা আমার মতো ব্যস্ততায় আমায় একটি শব্দও বলতে পারেননি তাঁদের প্রতিও ভালোবাসা।