সিলেটে ওমিক্রন নিয়ে উৎকণ্ঠা, স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ৪:১৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন নিয়ে সারা বিশ্বেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও। প্রতিবেশি দেশ ভারতে ওমিক্রন আক্রান্ত দুই ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর শঙ্কা বাড়ছে সীমান্তবর্তী এলাকা সিলেটেও। এ নিয়ে ইতোমধ্যে সিলেটের স্থলবন্দরগুলোতে বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের বড়মোহা গ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা এক প্রবাসীর বাড়িতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ওই প্রবাসী দেশে এসেছেন। গত বুধবার ওই প্রবাসীর বাড়িতে লাল পতাকা টানায় উপজেলা প্রশাসন।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে অসংখ্য প্রবাসী পৃথিবীর নানা দেশ থেকে সিলেটে ফিরেন। তাই ওমিক্রন নিয়ে সিলেটবাসীর অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন। তার মধ্যে নতুন করে এই ধরন ভারতে শনাক্ত হওয়াটা এই অঞ্চলের জন্য শঙ্কার বিষয়।
জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া ওমিক্রন ধরনকে ইতোমধ্যে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বেরে ২৩টি দেশে ‘বিপজ্জনক’ এই ধরন শনাক্ত হয়েছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার ভারতেও এ ধরন শনাক্ত হয়। সিলেটের সঙ্গে ভারতের তিনটি স্থলবন্দর রয়েছে। এসব স্থল বন্দর দিয়ে যাত্রীরা সব সময় যাওয়া আসা করেন। চলছে পণ্য আমদানি-রপ্তানিও। তাই অমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সিলেটে।
ওমিক্রন নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে সিলেটের সব স্থলবন্দরকে বিশেষ সতর্কবার্তা দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আফ্রিকাসহ যেসব দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে সেখান থেকে ভারত হয়ে সিলেটে কোনো ব্যক্তি এলে তাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ায়েন্টিনে থাকতে হবে। এছাড়া এখন থেকে ভারত থেকে কেউ এলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে তাকে দেশে প্রবেশ করাতে হবে। পাশাপাশি সব ইমিগ্রেশন সেন্টারকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে নির্দেশনা তা সিলেটের সব স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের স্থলপথে যোগযোগ তাই আফ্রিকা থেকে বা ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে এসব দেশ থেকে ভারত হয়ে সিলেটে কেউ এলে তাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারাই সীমান্ত দিয়ে আসবে তাদের প্রবেশের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। কারো শরীরে উপসর্গ থাকলে তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে।’
তিনি জানান, আগামী শনিবার ও রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের দুটি দল সিলেটের স্থলপথবন্দরগুলো পরিদর্শন করবেন। তখন এ সব বন্দরে কি সক্ষমতা আছে তা বুঝতে পারব।’
ভারতে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে সীমান্ত বন্ধ করা হতে পারে জানিয়ে বলেন, ‘এর আগেও যখন ভারতে ডেল্টা ছড়িয়ে পড়েছিল তখন সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবারও ওমিক্রন বাড়লে সীমান্ত বন্ধ হতে পারে। যদিও ওমিক্রন নিয়ে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত কোনো তথ্য নেই। এখন পর্যন্ত এর মৃত্যু হার নিয়েও পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।’
সিলেটের সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলোর সরাসরি কোনো ফ্লাইট চালু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপরও বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। স¤প্রতি তাদের আফ্রিকার কোনো দেশে যাতায়াত আছে কি না, সে বিষয়ও যাচাই করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগকে এ ব্যাপারে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
সিলেটে অক্সিজেন সাপোর্ট বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা, শাহপরাণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের কাজ চলছে।’
গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরের জুন-জুলাইয়ে শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে আগস্টের পর কমতে শুরু করে সংক্রমণ। চলতি বছরের প্রথম দিকেও সিলেটে শনাক্তের হার ছিল নিমুখী। তবে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছে। প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকেন। বাড়ে মৃত্যুর সংখ্যাও। সিলেটের সব হাসপাতাল রোগীতে ছিল পরিপূর্ণ। শয্যা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে আগস্টের পর কমতে শুরু করে সংক্রমণ। বর্তমানে শনাক্ত ও মৃত্যু প্রায় শূণ্যের কোটায় নেমেছে। তবে ওমিক্রন নিয়ে সিলেটবাসীকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ সিলেটের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চল ঝুঁকিতে আছে। এ কারণে সিলেবাসীকে ওমিক্রন নিয়ে অতিরিক্ত সর্তক থাকতে হবে। কারণ শীতের সময় অসংখ্য প্রবাসী দেশে ফিরেন। ইতোমধ্যে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। তাই এ সব দেশ থেকে যারা আসবেন তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।’