ছাতকে যে কারণে কালাম-কাকলী দ্বন্দ্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী। শিল্পনগরী ছাতকে দাপটের সঙ্গে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এরমধ্যে নানা সময় হয়েছেন আলোচিত পৌর শহরে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা বিপক্ষ বলয়ের অভাব নেই। এদের সঙ্গে লড়াই করে ছাতকের পৌর শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কালাম চৌধুরী। সম্প্রতি সময়ে পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী মুখোমুখি হয়েছেন তারই এলাকার মহিলা কাউন্সিলর তাসলিমা জান্নাত কাকলীর। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির ঘটনায় হঠাৎ করে মেয়র ও কাউন্সিলর একে অপরের প্রতিপক্ষ হওয়ায় ছাতকজুড়ে চলছে আলোচনা। কাকলীর বিরুদ্ধে পৌর কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। আর কাকলী মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যৌন হয়রানির।
ফলে ছাতকের সাম্প্রতিক এ লড়াইয়ের কারণে পৌর শহরে নতুন করে আলোচনা চলছে। দেখা দিয়েছে জল্পনাও। এসব ঘটনায় ৩টি মামলা করা হলে কাকলীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনের মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। অপর দুটি মামলা এখনো তদন্তাধীন। ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও তাসলিমা জান্নাত কাকলী। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘটনার সূত্রপাত। স্থানীয় শিববাড়ি হিউম্যান হুইলার অটো সিএনজি ও ড্রাইভার্স শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির জের ধরে কয়েকজন শ্রমিক নেতা মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর কাছে বিচারপ্রার্থী হন। এরপর মেয়র বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের আহ্বান করলে ওই বৈঠকে কাউন্সিলর কাকলীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শ্রমিক নেতা কাকলী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুললে ক্ষুব্ধ হন পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর কাকলী। বৈঠকে উপস্থিত থাকা লোকজন জানিয়েছেন, এ সময় বৈঠকে উপস্থিত শ্রমিক নেতাদের গালিগালাজ করেন কাকলী। মেয়র এতে হস্তক্ষেপ করলে কাকলী তার উপরও ক্ষোভ ঝাড়েন।
কারণ, অভিযোগকারীরা ছিল মেয়রের আত্মীয়তার সূত্রের স্বজন। কাউন্সিলর কাকলীর ক্ষোভ প্রকাশের কারণে মেয়র বিরোধপূর্ণ সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে মেয়র পরিষদের সভার আয়োজন করেন। পরিষদও কাকলীর এ ধরনের আচরণের নিন্দা জানায়। পরবর্তীতে ২৬শে আগস্ট পরিষদের আরেক সভায় কাকলীর উপর অনাস্থা তুলে বিষয়টি লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এরপর গত ২৭শে আগস্ট পৌর কার্যালয়ের কাউন্সিলর কাকলী ও তার স্বামী এবং ভাইয়েরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ তুলে ছাতক থানায় পৌর কাউন্সিলর কাকলী ও তার স্বামী মাসুম আহমদ, ভাই কানন ও কার্জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন পৌর কর্মকর্তা দীপ্ত বণিক।
এদিকে, ঘটনার পর পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন কাউন্সিলর কাকলী। এ অভিযোগে তিনি পৌর মেয়রকে আসামি করে গত ৩১শে আগস্ট সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাতক-সুনামগঞ্জ আদালতে গত বুধবার ইজিবাইক স্ট্যান্ড ছাতকের ম্যানেজার আতিকুল মিয়া বাদী হয়ে কাউন্সিলর কাকলীর বিরুদ্ধে চাঁদাবজির মামলা করেছেন। এ মামলায় তিনি আসামি করেছেন কাউন্সিলর তাছলিমা জান্নাত কাকলী, কাউন্সিলর কাকলীর স্বামী মাছুম আহমদ, কাকলীর ভাই নোমান ইমদাদ কানন ও কার্জন মিয়াকে।
মামলার বাদী আতিকুল মিয়া জানিয়েছেন, ‘আসামিরা হাতে থাকা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে গাড়িগুলোতে আঘাত করতে থাকলে উপস্থিত সাক্ষী ও পথচারীরা আসামিদের থেকে আমাদের রক্ষা করে। তা না হলে আসামিরা আমাদের মেরে ফেলতো। আসামিরা যাওয়ার সময় আবারো আমাদেরকে হত্যা করে আমাদের লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ কারণে তিনি মামলা করেছেন’। এদিকে, ছাতক থানা পুলিশ ইতিমধ্যে দ্রুত বিচার আইনে মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে। ওই চার্জশিটে কাউন্সিলর কাকলী, তার স্বামী মাসুম, ভাই কানন ও কার্জনকে আসামি করা হয়েছে।
ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কাউন্সিলর কাকলীর বিরুদ্ধে গত ১৮ই আগস্ট তার কাছে ইজিবাইক চালক আতিকুল মিয়া, নূরুল হোসেন ও বিরাজ আলী একটি লিখিত অভিযোগ করেন। গত ২২শে আগস্ট অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের বিশেষ সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে উপস্থিত ১০ সদস্যের মধ্যে ১০ জনের সম্মতিতে ওই নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় ২৬শে আগস্ট অনুষ্ঠিত পরিষদের অপর এক সভায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পৌর পরিষদ। অভিযোগটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য নানা মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে, কাউন্সিলর তাসলিমা জান্নাত কাকলী দাবি করেছেন, কেবলমাত্র যৌন হয়রানি করতে ব্যর্থ হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা, নিন্দা প্রস্তাব ও মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। অনেক আগে থেকেই নানাভাবে তাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি তিনি নীরবে চেপে গেলেও এখন প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠায় তিনি প্রতিবাদী হয়েছেন। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানান।