মৎস্য খাতে আজম আলীর সফলতায় জেলাতে পুরষ্কৃত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৭:৩৪ অপরাহ্ণ
বালাগঞ্জ প্রতিনিধি:
মাছের গুণগত পোনা উৎপাদন করে সাফল্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের মো. আজম আলী। সবার কাছে পরিচিতি অর্জন করা আজম আলী উপজেলার মৎস্য চাষিদের প্রেরণা যোগাচ্ছেন। তার মৎস্য খামারে অনেককে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিয়েছেন। গতবছর সিলেট জেলার মধ্যে গুণগত মাছের পোনা উৎপাদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২১ উপলক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর আজম আলীকে সম্মাননা দিয়েছেন। মৎস্য সপ্তাহ শেষে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের হাত থেকে সম্মাননা ও সনদ গ্রহণ করেন তিনি। এছাড়া, মাছের পোনা নার্সারার হিসেবে সফলতায়-২০১৯ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সম্মাননা অর্জন করেন এই সফল এই উদ্যোক্তা।
জানা গেছে, আজম আলীর ৪ ভাই’র মধ্যে ২ভাই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমালেও তিনি প্রবাসমুখী না হয়ে শখের বসে মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েন। ২০০৪ সালে নিজের মাত্র ১৮ শতক জায়গায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে পোনা উৎপাদন শুরু করেন। তবে, শুরুটা তার ভালো যায়নি। ওই বছরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সব কিছু উলট-পালট করে দেয়। বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। এরপরও হাল ছাড়েননি। আবারও বিনিয়োগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। এরপর ধীরে-ধীরে সফলতার মুখ দেখতে থাকেন তিনি।
সাফল্যের বিষয়ে চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক আজম আলী (৫৮) জানালেন, বর্তমানে ৭০ শতক জায়গার মধ্যে গড়ে তুলেছেন মেসার্স আলী মৎস খামার। উৎপাদিত পোনা স্থানীয় খামারীদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করেন। উপজেলা মৎস অফিসের পরামর্শ এবং সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে মিশ্র জাতের এই পোনা উৎপাদন ও মাছ চাষে বাৎসরিক প্রায় ৫-৬ লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে তার। তিনি আরো বলেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র বণিকের দিক নির্দেশনায় আমি গুণগত মানের পোনা উৎপাদনে সম্মাননা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। আমার এই অর্জনে তাঁর পরিশ্রম ও অবদান রয়েছে। ভবিষ্যতে খামার আরও বড় করতে চাচ্ছি এবং মা মাছ থেকে সরাসরি ডিম সংগ্রহ করে আধুনিক পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদনের ইচ্ছা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা পরিকল্পনা মাফিক মাছ চাষ করলে একদিন নিজেকে ভালো অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। স্থানীয় বাসিন্দা আনছার মিয়া বলেন, খামারীরা আজম আলীর কাছ থেকে পরামর্শ নেন। তাকে অনুকরণ করে এলাকার অনেকেই মাছ চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র বণিক বলেন, মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সিলেট জেলার মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে যে তিনজন সম্মাননা অর্জন করেছেন তার মধ্যে আজম আলী একজন। বিগত বছরগুলোতে জাতীয় মৎস্য পুরস্কারে আজম আলীর সফলতায় সম্মাননার জন্য তিনি মনোনিত হোন, পুরষ্কৃত হোন। আমরা সমন্বিতভাবে বালাগঞ্জের মৎস্য খাতকে আরো এগিয়ে নিতে চাই। বিগত দিনেও উপজেলা মৎস্য বিভাগের কাজগুলো মূল্যায়িত হয়েছে। ২০১৭ সালের উন্নয়ন মেলায় উপজেলা পর্যায়ে মৎস অফিস ২য় স্থান ও ২০১৮ সালের উন্নয়ন মেলায় সেরা স্টলের ২য় পুরস্কার অর্জন করে। চলতি বছরে কৃষি প্রযুক্তি মেলায় ২য় পুরস্কার ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মেলায় সেরা স্টলের ২য় স্থান অর্জন করে। এই সাফল্যকে ধরে রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সিলেট জেলা মৎস কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থানীয় মৎস্য খামারীরা সহজেই তার কাছ থেকে পোনা সংগ্রহ করতে পারছেন। মৎস সম্পদকে এগিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এজন্য আমরা তাকে উৎসাহিত করেছি।