সিলেটে আস্থার অ্যাম্বুলেন্সে অস্বস্তি, দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২১, ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
হবিগঞ্জের মাধবপুরের মুহিবুর রহমান (৫৫) করোনায় আক্রান্ত হলে স্বজনরা তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অ্যাম্বুল্যান্সে কোনো রকম অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। ওই হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বা সাধারণ শয্যার কোনোটাই না পেয়ে স্বজনরা মুহিবুরকে নিয়ে রওনা হয় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিকে। কিন্তু সেখানে পৌঁছার আগেই মারা যান তিনি।
এই করোনা রোগীর মৃত্যুর পর স্বজন ও চিকিৎসকরা বলেছেন, অ্যাম্বুল্যান্সেই যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে হয়তো তাঁকে বাঁচানো যেত।
করোনা মহামারিকালে যারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে বা মারা যাচ্ছে তাদের স্বজনদের অভিজ্ঞতা কমবেশি একই। রোগী পরিবহনে ঢাকাসহ সারা দেশে অ্যাম্বুল্যান্সের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে নেই রোগীর জন্য প্রি-মেডিকেলের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা।
অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে যেসব গাড়ি চলছে সেগুলোর বেশির ভাগই মাইক্রোবাস। এগুলোকে সাইরেন, স্ট্রেচার ও অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে কথিত অ্যাম্বুল্যান্সে রূপান্তর করা হয়েছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নামে অ্যাম্বুল্যান্সের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ভাড়ায় চালানো হচ্ছে।
কথিত এসব অ্যাম্বুল্যান্সে নেই আন্তর্জাতিক মানের জরুরি সেবাসামগ্রী। এ কারণে ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায়ই মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। থাকছেন না চিকিৎসক বা নার্স। নেই পরিচালনার প্রশিক্ষণ। এসব অনিয়ম বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো ব্যবস্থা সরকারিভাবে নেই। পুলিশ ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকলেও নীতিমালা তৈরিতে উদ্যোগ নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নীতিমালা তৈরি করে অ্যাম্বুল্যান্স সেবাকে আইনের আওতায় না আনতে পারলে অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এইচ এ নাজমুল হাকিম বলেন, একটি অ্যাম্বুল্যান্সে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, কার্ডিয়াক মনিটর, ইমার্জেন্সি ড্রাগসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণসহ আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) থাকা জরুরি। হাসপাতাল ও রোগীর অবস্থানের দূরত্ব থাকায় অনেক সময় ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সার্ভিসের আগে রোগীকে প্রি-হসপিটাল কেয়ার দিতে হয়। করোনায় সংকটাপন্ন এমন রোগীর প্রি-হসপিটাল কেয়ার খুবই জরুরি। এ ধরনের চিকিৎসার অভাবে বছরে অনেক লোকের মৃত্যু ঘটে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বাস্তবে দেশের অ্যাম্বুল্যান্সগুলোতে চিকিৎসা সুবিধার ছিটেফোঁটাও নেই। উন্নত হাসপাতালে আমদানি করা কিছু অ্যাম্বুল্যান্সে প্রথমে এসব সুবিধা থাকলেও নজরদারির অভাবে কিছুদিন পর সবই হারিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুল্যান্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেওয়ান বলেন, বেশির ভাগ অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক বেসরকারি হাসপাতালের নামে নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করেন।
বিআরটিএর পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পর্যায় নয়, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অধীনে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো দেখেই লাইসেন্স দেওয়া হয়। সেসব প্রতিষ্ঠানই অ্যাম্বুল্যান্স দেখবে। অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়ার ব্যাপারে কোনো নীতিমালা নেই। এ কারণে ভাড়ার ব্যাপারে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। আমরা নীতিমালা তৈরির জন্য প্রস্তাব দিয়েছি।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ