কামরানকে ভুলেনি সাধারণ মানুষ, মনে রাখেনি আ’লীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২১, ৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ
সিলেট পৌরসভার কমিশনার থেকে চেয়ারম্যান। এরপর সিটি করপোরেশনের দু’দফা মেয়র। ছিলেন শহর ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিকবারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। দায়িত্ব পালন করেছেন কেন্দ্রিয় সদস্য হিসেবেও।
সিলেট আওয়ামী লীগ মানেই ছিল বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আপদে-বিপদে তিনি ছিলেন নেতাকর্মীদের আশ্রয়স্থল। দলের প্রয়োজনে ছুটে বেরিয়েছেন পুরো বিভাগ। কখনো দলীয় প্রতীকের বিজয় নিশ্চিতে, আবার কখনো সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুতে বিরামহীন ছুটে চলা ছিল তার। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি তৈরি করেছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। তার আলোকশিখার নিচে থেকে আলোকিত হয়েছেন কতোশতো নেতা। শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষেরও পরমাত্মীয় ছিলেন তিনি। যে কারণে ভোটের হিসেবে পরাজিত হলেও আমৃত্যু তিনি ছিলেন ‘জনতার মেয়র’।
জনবান্ধব এই রাজনীতিকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। গেল বছরের এই দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। প্রয়াত কামরানকে এখনো শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করেন সিলেটের সাধারণ মানুষ। তার অভাব অনুভব করে আফসোস করেন। কিন্তু মৃত্যুর এক বছর যেতে না যেতে তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। মারা যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হলেও একটি শোকসভার আয়োজন করতে পারেনি মহানগর আওয়ামী লীগ। মৃত্যুবার্ষিকীতে ঘোষণা করা হয়েছে দায়সারা কর্মসূচি।
বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গেল কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে দলের অঙ্গ সংগঠন, শুভাকাঙ্খি ও ব্যক্তি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এদিকে, মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিজেরা কোন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ না নিয়ে ওয়ার্ড কমিটির উপর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের দায়িত্ব দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। কেবলমাত্র সকাল সাড়ে ৯টায় মহানগরের নেতারা মিলে কামরানের কবর জিয়ারত করবেন। এতেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন নিজেদের দায়িত্ব। আর বাদ আছর প্রত্যেক ওয়ার্ডে মিলাদ মাহফিল করার কর্মসূচি ছুড়ে দিয়েছেন তারা।
করোনার অজুহাত দেখিয়ে গেল এক বছরেও মহানগর আওয়ামী লীগ বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের শোকসভার আয়োজন করেনি। কিন্তু গত ১১ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় এই শোকসভার।
এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী জমকালো নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু কেবলমাত্র কামরানের শোকসভার আয়োজনটি আটকে যায় করোনার অজুহাতে। অথচ মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রথম সভায় শোকসভা আয়োজনের রেজুলেশন নেয়া হয়।
শোকসভা আয়োজন করতে না পারায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝেও অস্বস্তি ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল বলেন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের শোকসভা আয়োজন নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি একবছরেও আমরা তা করতে পারেনি। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো উদ্যোগ নেয়া হবে।
সংগঠনের আরো এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সবধরণের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের শোকসভার প্রসঙ্গ ওঠলেই অজুহাত দাঁড়ায় করোনার। তাঁর মতো একজন জনবান্ধব নেতার মৃত্যুতে একবছরেও শোকসভা করতে না পারা খুবই দু:খজনক।’
এদিকে, কামরানকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ভুলে গেলেও এখনো তাকে মনে রেখেছেন সাধারণ মানুষ। সিলেট নগরীর কাজিটুলা এলাকার শিক্ষক হুমন আহমদ চৌধুরী কামরানের শূণ্যতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আগে সিলেটে ছোট-বড় কোন সমস্যা হলে মানুষ কামরানের কাছে ছুটে যেতেন। অথবা সমস্যা শুনলে কামরান নিজে ছুটে আসতেন। তার মৃত্যুতে নগরবাসী তাদের প্রকৃত অভিভাবককে হারিয়েছে। সিলেটের মানুষ আপদে-বিপদে তার শূণ্যতা হাড়ে হাড়ে অনুভব করছে।’
সূত্র: সিলেট ভিউ