কমলগঞ্জে পাত্রখোলা চা-শ্রমিকদের দিনভর শ্রমিকদের দু’পক্ষের উত্তেজনা, পুলিশ মোতায়েন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২১, ৮:১৯ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন পাত্রখোলা চা-বাগানে দখলদারি নিয়ে চা-শ্রমিকদের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন। কাজ বন্ধ রেখে চা-শ্রমিকদের একটি অংশ চা-বাগান কারখানার সামনে দেশীয় অস্ত্র, তীর-ধনুক, দা-লাঠি নিয়ে অবস্থান করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টায় এ ঘটনা ঘটে।
এখন পর্যন্ত চা-বাগানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শ্রমিকদের বড় একটি অংশ জানায়, চা সেকশনে বজ্রপাতের সময় নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই, ম্যানেজমেন্টের অনুগত লোকজন সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও সাধারণ শ্রমিকরা তা থেকে বঞ্চিত। চা শ্রমিকদের দীর্ঘদিন থেকে বসত ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকলেও ম্যানেজমেন্ট মেরামত করে দিচ্ছেনা। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই তাদের ন্যায্য দাবীদাওয়া নিয়েই এই বিক্ষোভ করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পাত্রখোলা চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি গ্রæপের মধ্যে দখলদারি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি শিপন চক্রবর্তী ও সম্পাদক দুলাল গ্রæপের মধ্যে দ্ব›দ্ব রয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষ সম্পাদক গ্রæপের সঙ্গে সকল সুযোগ-সুবিধা ও কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণে সভাপতি গ্রæপ ক্ষুব্ধ রয়েছে। এর জের ধরেই সোমবার সকালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে সভাপতি গ্রæপের নয়ন কুর্মী (৩৫) ও সম্পাদক গ্রæপের ল²ীন ধর ভৌমিক (২৮) আহত হন।
তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের একটি পক্ষ কারখানার গেটের ভেতরে থাকা পাগলা ঘণ্টা বারবার পিটিয়ে শ্রমিকদের একত্রিত করছে। উত্তেজিত শ্রমিকেরা চা-বাগানের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। সোমবার সকাল ৯টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (কমলগঞ্জ- শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহিদুল ইসলাম মুন্সী, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। সকাল থেকে চার গাড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। দুপুরে ঘটনাস্থলে র্যাব মোতায়েন করা হয়। তবে এ ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভকারীদের একটি পক্ষ চা-বাগানের সমস্যাকে দায়ী করছেন।
চা-শ্রমিক শংকর কৈরী, ফুলকুমারী চাষা, অলকা গঞ্জু, পহেলা গীতা, গোলশান বিবি, রাধেশ্যাম গড়, নাগিনা নুনিয়া, জীবন তেলী, পুজন দাস অভিযোগ করে বলেন, চা সেকশনে আমাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, ম্যানেজমেন্টের অনুগত লোকজন সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও আমরা সাধারণ শ্রমিকেরা তা থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন দাবী করেও বসত ঘর মেরামত ও চিকিৎসা সেবা না দেয়ায় শ্রমিকদের মাঝে বিক্ষোভ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পাত্রখোলা চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি শিপন চক্রবর্তী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে এ চা-বাগানের বেশ কিছু শ্রমিকের বসতঘর জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতর বৃষ্টির পানি পড়ে। চা বাগান কর্তৃপক্ষকে ঘর মেরামতের দাবি জানিয়ে আসলেও দেখা গেছে একটি পক্ষের চা-শ্রমিকদের ঘর মেরামত করা হলেও প্রকৃত জরাজীর্ণ ঘর মেরামত ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে না। এ দাবীতে সোমবার সকালে পাত্রখোলা চা বাগানের নারী ও পুুরুষ চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে চা বাগান কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে দাবী আদায়ে বিক্ষোভ করে।
অপরদিকে চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক দুলাল অলমিক জানান, আসলে সভাপতি বহিষ্কৃত থাকায় বাগানে দায়-দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত। সে কারণেই তিনি গ্রæপ সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন।
তবে ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) এজিএম কাম পাত্রখোলা চা-বাগান ব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম সেলিম বলেন, আসলে বাগান ব্যবস্থাপনার কোনো সমস্যা নয়। চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি গ্রæপের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ বিরোধেই পাত্রখোলা চা-বাগানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতিও কিছুটা শান্ত হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান করা হবে।