সিলেটে ফের পাথর শ্রমিকের মৃত্যু, লাশ নিয়ে লুকোচুরি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ২:২২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না শ্রমিকের মৃত্যু। একের পর এক পাথর শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেই। এবার কোম্পানীগঞ্জের বাঙ্কার এলাকায় পাথর তোলার সময় এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
নিহত শ্রমিকের নাম জহির আলম (২০)। তিনি সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ এলাকার মৃত ইউসুফ আলীর পুত্র বলে জানা গেছে। জহির পরিবারের সাথে কোম্পানীগঞ্জের কালীবাড়ি এলাকার লীলাইবাজারের জালাল মিয়ার কলোনিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন।
জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রেলওয়ের বাংকার থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। তাদের নির্দেশে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে জহির নামে ওই কিশোর শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। পরে সকাল ১০টার দিকে বিজিবি লাশ উদ্ধার করে। তবে শ্রমিক মৃত্যুর বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছিল লুকোচুরি।
বিজিবি বলছে, সকালে উদ্ধার করে বেলা ১২টার দিকে তারা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আর বেলা ২টা ২৩ মিনিটে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ‘মৃত্যুর কোনো খবর জানে না’ বলে জানানো হয়। পরে ৩টা ৫ মিনিটের দিকে তারা জানিয়েছে, ‘লাশ তারাই উদ্ধার করেছে।’
লাশ উদ্ধারের বিষয়টি প্রথমে নিশ্চিত করেন কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের কালাছাদক ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, লাশটি উদ্ধার করে আমরা বেলা ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। পরে বিজিবি মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলে থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তবে বিজিবির কাছ থেকে লাশ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি কেএম নজরুল। তিনি বলেন, ঘটনাটি বাঙ্কার এলাকায় নয়। দয়ারবাজার এলাকায় হয়েছে। শ্রমিকরা বাঙ্কার থেকে চিপপাথর তুলে নিয়ে যাওয়ার পথে ঝড়ে নৌকা থেকে সে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। পরে তারা লাশ নিয়ে যেতে চাইলে আমরা রাস্তা থেকে লাশ থানায় নিয়ে এসেছি।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন রাতে পুলিশ প্রশাসন ও বাঙ্কারের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে (আরএনবি) ম্যানেজ করে বাঙ্কার এলাকায় রেলওয়ের ভূমি কেটে চলে পাথর উত্তোলন। নৌকাপ্রতি ২০ হাজার টাকা আদায় করে পাথর উত্তোলনের ব্যবস্থা করে দেয় পাথরখেকো চক্র। প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও চলছিল চিপপাথর উত্তোলন। ভোরে হঠাৎ ঝড় শুরু হলে ঘটে বিপত্তি। এ সময় জহির নৌকা থেকে পড়ে গেলে পাথরভর্তি নৌকার চাপায় পানিতে থলিয়ে যায়। পরে সকালে বিজিবির মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে নিহত জহিরের ফুপু মায়ারুন বেগম বলেন, আমার ভাইয়ের ৪ ছেলে মিলে পাথর তুলতে ধলাই নদীতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জহির নৌকা থেকে পড়ে গেলে তারে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিজিবির অনুমতি নিয়ে ডুবুরি দিয়ে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ এখনো থানায় রয়েছে।