মৌলভীবাজরে অবৈধ বিদ্যুৎ এর শর্টসার্কিটে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি: ভয়াবহ দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেন কয়েক হাজার মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ৬:৫৬ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজরের কুলাউড়া পৌর শহরের দক্ষিণ মাগুরায় একটি নতুন ভবন নির্মান করছেন এক প্রবাসী। ওই ভবনের নির্মাণ কাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালাতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনকালে ১১ হাজার কেভির সঞ্চালন লাইনে শর্টসার্কিট হয়ে আগুণ ধরে যায়। ঘটনার পর প্রায় ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হয় আংশিক এলাকার বাসিন্দাদের।
এতে আবাসিক এলাকার বেশ কয়েকটি বাসায় বৈদ্যুতিক লাইনে আগুণ লেগে বাসার ডিজিটাল মিটারসহ ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনেক বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ শর্টসার্কিটের কারণে প্রায় ১৫-২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (৬এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে কুলাউড়ার দক্ষিণ মাগুরা আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুলাউড়া পৌর শহরের দক্ষিণ মাগুরা আবাসিক এলাকায় মাস তিনেক আগে আপ্তাব মিয়া নামে এক প্রবাসী ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণকাজের তত্বাবধানে রয়েছেন ওই এলাকায় বাসিন্দা ও প্রবাসীর মেয়ে জামাতা হেলাল আহমদ। নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা রড কাটার গ্রাইন্ডিং মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য বৈধ সংযোগ নেন ভবনের মালিক। কিন্তু বৈধ সংযোগ থাকা সত্বেও নির্মাণ কাজে দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা বেশ কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যা হলে ১১ হাজার কেভির সঞ্চালন লাইন থেকে অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নির্মাণ কাজের যন্ত্রপাতি পরিচালনা করে আসছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার রাতে একইভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে যান নির্মাণ শ্রমিক ও ঠিকাদার। এসময় ১১ হাজার কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ফেইজ ও নিউটেল তার একত্রিত হয়ে শর্ট সার্কিট এবং হাইভল্টেজের কারণে ওই এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসময় একাধিক বাসার মিটার পুড়ে যায়। এছাড়া বাসিন্দাদের ব্যবহৃত এসি, ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, ওইফাই রাউটার, ফ্যানসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. উসমাণ গণি গ্রাহকদের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানালেও কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
তবে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এ ঘটনায় তাদের ১৫ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সাথে দেখা করেছেন পৌর মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ। ঘটনার পর প্রায় ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হয় আংশিক এলাকার বাসিন্দাদের।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাছিত মঞ্জিল-২ এর সত্বাধিকারী আব্দুল অহিদ বলেন, আপ্তাব মিয়ার বিল্ডিং নির্মাণের জন্য প্রতিদিন রাতে ঠিকাদার ও শ্রমিকরা মেইন লাইন থেকে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মেশিন চালান। এজন্য বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে ও হাই ভোল্টেজের আমার বাসার ৯টি ডিজিটাল মিটার পুড়ে গেছে। আমার বাসাসহ বিল্ডিংয়ে থাকা ভাড়াটিয়ার এসি, ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, ফ্যানসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে। এতে আমার বাসার ও ভাড়াটিয়াদের ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মিটার পুড়ে যাওয়ায় আমার বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা প্রদীপ দত্ত, গোবিন্দ রায়, হরসুন্দর তালুকদার জানান, আমাদের নিজের বাসা ও বাসার ভাড়াটিয়াদের ফ্রিজ, টিভি ও ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে। আপ্তাব মিয়ার বিল্ডিংয়ের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ লাগানোর সময় শর্ট সার্কিটে আমার বাসার মিটার পুড়ে গেছে। এতে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এলাকার অনেক বাসার ফ্রিজ, টিভিসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে।
প্রবাসীর মেয়ে জামাতা হেলাল আহমদ বলেন, অবৈধ সংযোগ নয়। আমাদের বৈধ মিটারের সংযোগেই কাজ হচ্ছিলো। নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মেইন লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ক্ষতি যেটা হয়েছে সেটাতো কিছু করার নেই। এজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হলে আমরা দিবো।
কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. উসমাণ গণি বলেন, প্রবাসীর বৈদ্যুতিক মিটার ও যে তারের জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলো জব্দ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ আইনের বিদ্যুৎ আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। র ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা থানায় অভিযোগ দিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বিদ্যুৎ বিভাগ।