দুর্নীতি থেকে রক্ষা পেতে সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরত: তদন্তের নির্দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মার্চ ২০২১, ৫:৪৮ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পর ৯টি প্রকল্পের ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেন। দুর্ণীতির বিষয়ে মামলা উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচিত নারী ইউপি সদস্যদের তিন বছর যাবত ভাতা ও প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন ২ নারী সদস্য।
অভিযোগ ও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪ নম্বর শমসেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা জুয়েল আহমদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর থেকেই পরিষদের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে এলজিএসপি, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্পের ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠে। ইউপি চেয়ারম্যানের দুর্নীতির অভিযোগ এনে শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে দুদকের তদন্তে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পায়। প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পর ৪১টি প্রকল্পের মধ্য ৯টি প্রকল্পের ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেন। পরে ২০১১-১২ অর্থবছরে রাধানগর বারিক মিয়ার বাড়ির সামনে গার্ডওয়াল ও রাস্তা সংস্কার ৬১ হাজার ৪৪৬ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪টি নলকূপের ১ লক্ষ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে শমশেরনগর চা বাগানের রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণের ১ লক্ষ ২০ হাজার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ডবলছড়া-কানিহাটি টিলা রাস্তায় ইটসলিং এর ৯০ হাজার, গোবিন্দপুর পিচ রাস্তামুখ হতে মশাহিদ মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ইট সলিং ৬২ হাজার ৯৯১ টাকার ৯টি প্রকল্পের ৪ ল্খা ৩৪ হাজার ৪৩৭ টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন। আব্দুল গফুরের দায়েরকৃত ওই মামলা বর্তমানে উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে।
এদিকে সম্মানি ভাতা না পেয়ে সংরক্ষিত আসনের ২ নারী ইউপি সদস্য ৯ জানুয়ারী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউনিয়নের নির্বাচিত নারী সদস্য শারমিন বেগম চৌধুরী ও নমিতা সিং বলেন, ২০১৮ সন হতে ইউনিয়ন পরিষদের নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাবিখা প্রকল্প ও গরিব লোকদের জন্য সৌরবিদ্যুৎ এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সার, বীজ এর কোন বরাদ্ধ পাইনি। বিধি মোতাবেক প্রতি এক বছর পর পর ইউনিয়ন পরিষদের তিন সদস্যের যৌথ ব্যাংক হিসাবে পর্যায়ক্রমে নারী সদস্য পরিবর্তন হওয়ার কথা। সেখানেও আমাদেরকে সদস্যভূক্ত করা হয়নি। ফলে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত ইউপি সদস্য হিসাবে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত রয়েছি। তারা আরও বলেন, ইতিপূর্বেও আমরা ইউনিয়ন পরিষদের নানা দুর্ণীতি নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি। ইউনিয়ন পরিষদের এলজিএসপি, কর্মসৃজনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে এভাবে ব্যাপক দুর্ণীতির অভিযোগ রয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের দুর্ণীতি বিষয়ে দুদকে কয়েকটি প্রকল্পের নামে দেয়া আমার অভিযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ রাজস্ব খাতে টাকা জমা দিয়েছেন। এতে দুর্ণীতি প্রমাণিত হয়েছে। দুর্ণীতির এই বিষয়টি এখন আদালতে গড়িয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ এর বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।