সমন্বিত সবজি চাষে লাভবান বালাগঞ্জের নজরুল ও নুরুল’র সাফল্যের গল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মার্চ ২০২১, ৬:২৮ অপরাহ্ণ
জাগির হোসেন, বালাগঞ্জ:
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্বগৌরিপুর ইউনিয়নের নতুন সুনামপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ছাখন ও নুরুল ইসলাম সমন্বয়ে চলিত মৌসুমের সব ধরনের সবজি চাষ করে আশানুরুপ বাম্পার ফলন হওয়ায় মনে আনন্দের জয়োল্লাস বয়েছে।
সরেজমিনে প্রদর্শনীতে, লিখছি দুই সফল চাষীর কথা: কর্ণে এসেছে বহুদিন, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে ব্যাপক জমি নিয়ে চলিত মৌসুমের বিভিন্ন রকম সবজি চাষের কথা। সে সুবাদে গত ১লা মার্চ মোটরযান যোগে সেই প্রদর্শনীতে বিকেলে যাই, দৈনিক জালালাবাদ’র সাংবাদিক আবুল কাশেম অফিক ও দৈনিক সকালের সময়ের সাংবাদিক জাগির হোসেন(আমি)। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আলোয় হাসছে সবজি ক্ষেত ও চাষী।
চাষী নজরুল হোসেন ছাখন ও নুরুল হোসেনের সাথে আলাপ করে তাঁদের প্রদর্শনী সম্পর্কে জানা যায়, বিগত ২ বছর আগে অনেকটা সখ ও নিজেদের পরিবারের জন্য বিষমুক্ত সবজির চাহিদার পূরনে অল্প সবজি চাষ কর, প্রথমদিকে বিভিন্ন কারণে তেমন ভালো ফলন না হলেও পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে স্বজনদের দেন। নিজের উৎসাহে গত ২ বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে স্বল্প চাষ করলেও এবার ভিন্ন পর্যায়ে ৭০বিঘা জমিতে ১লক্ষ ৩০হাজার টাকা ব্যয় করে পনেরো ধরনের মৌসুমশীর্ষ ও আগত মৌসুমি সবজি ফলান। এরমধ্যে গম ৫বিঘা, সূূর্যমুখী ১৭বিঘা, মিষ্টি কুমড়া ১৪বিঘা, ক্ষিরা ৫ বিঘা, ধনিয়া ৭বিঘা, সরিষা ৫বিঘা, বাদাম ৭বিঘা, করলা ১বিঘা, কুমড়া ১বিঘা, ঢেঁড়স ও ডাটা ১বিঘা, তরমুজ (পরীক্ষা মূলক)ও ছিঁচিঙ্গা ১বিঘা, লালশাক ১বিঘা, কচু ২বিঘা জমিতে এসব মিশ্র চাষে বেশ লাভবান হবেন বলে আশাবাদী তাঁরা।
উপরোক্ত উৎপাদনে বাম্পার ফলন, অপরদিকে বাজারদর মোটামুটি ভালো থাকায় অল্প সময় ও পুঁজিতে অধিক মুনাফা পাবেন। দেখা যায়, স্থানীয় চাহিদার তুলনায় অধিক সবজির আবাদ ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটাতে বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহেই বেশ কয়েক প্রজাতির উৎপাদন কৃত ফসলাদি বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যাবে। কেমন লাভ্যাংশ আসতে পারে এই বাম্পার ফলন থেকে নজরুল ও নুরুলের সাথে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, কৃষি অফিসের বাজারমূল্য মতে, ক্ষিরা ১০হাজার, মিষ্টি কুমড়া ২লক্ষ, গম ১লক্ষ ২৫হাজার, বাদাম ১লক্ষ ১২হাজার, সূর্যমুখী ১লক্ষ ২হাজার, ধনিয়া ১১হাজার, করলা ৩০হাজার, কুমড়া ৬হাজার, ঢেঁড়স ও ডাটা ২০হাজার, কচু ২০হাজার। মোট পরিকল্পিত বাজেট ৬লক্ষ ৩৬ হাজার। এপর্যন্ত বাজারে বিক্রি করেছেন ক্ষিরা ৬২ হাজার, মিষ্টি কুমড়া ১০ হাজার, সরিষা ২০ হাজার।
সবজি চাষে বেশি মুনাফা হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে সবজির। কথার প্রসঙ্গেঁ মাশা আল্লাহ প্রদর্শনীর পরিচালক বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতায় ফসল ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে পানির সুব্যবস্থা থাকলে আশাতিৎ ফলন হতো। তাঁরা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকারের কাছে জোর দাবি করেন, কৃষি প্রযুক্তির আধুনিক যন্ত্রাদি সহ কৃষি ভুর্তকি প্রদান করলে আমরা সহ বাকি কৃষকরা ফসলাদি ফলাতে উদ্ভুদ্ধ হবে। এতে করে সরকারের অর্থনৈতিক খাতে প্রভাব ফেলবে বলে আমরা আশাবাদী।
বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষিবিদ সুমন মিয়া বলেন, সৌরশক্তি ও পানি সাশ্রয়ী মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প কর্তৃক পতিত জমি চাষের আওতায় এসেছে। এতে এক ফসলী জমিকে দুই-তিন ফসলীতে রুপান্তর করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম মাশা-আল্লাহ প্রদর্শনীতে যেসব ফসলাদি উৎপাদন করেছেন তাতে আমরা আনন্দিত। এগুলো দেখে আগামীতে অনেক চাষী আগ্রহের সাথে সবজি ক্ষেত করতে আগ্রহপ্রকাশ করেছেন। এরকম উদ্যোক্তা তৈরী হলে আগামীতে তার দেখাদেখি আরও অনেকে এগিয়ে আসবে এতে কৃষি একটি লাভ জনক পেশা হিসাবে দাঁড়াবে। সরকার থেকে ভুর্তকি দিয়ে সূর্যমুখী তৈল নিষ্কাশন যন্ত্র আসলে মাশাআল্লাহ সমিতির অগ্রাধিকার থাকবে এবং কৃষি অফিস থেকে যতটুকু সম্ভব তাঁদের কে সহযোগীতা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, উপজেলায় চলতি মৌসুমে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা দাড়িয়েছে ১৮০৮ হেক্টর জমিতে।