মৌলভীবাজারে দুই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৫:০৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিক্সা, মিশুক ও সিএনজি পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা অর্থ আতœসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নং-চট্ট-২৩৫৯) এই দুই নেতার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে সিলেট শ্রম আদালতে মামলা (নং-৩০/২০২০) করেন বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ পরিচালক মোঃ নাহিদুল ইসলাম।
সূত্রে জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নের ২০১৮ সালের বার্ষিক রিটার্ন দাখিলের জন্য ২০১৯ সালের ২ জুলাই একটি পত্র দেয় বিভাগীয় শ্রম দপ্তর। ঐ পত্রে ৩০ দিনের মধ্যে বার্ষিক রিটার্ন শ্রম দপ্তরে দাখিল করতে বলা হয়। পরে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্যাডে ২০১৮ সালের রিটার্ন দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দাখিলকৃত ২০১৮ সালের আয় ব্যয়ের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর দপ্তরের পত্রে প্রয়োজনীয় রেকর্ড পত্র সহ দপ্তরে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়। পরে আবারও ২ ডিসেম্বর দপ্তরের আরেকটি স্মারকে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদেরকে বলা হলে অভিযুক্তরা উপস্থিত হয়নি।
জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নের ২০১৮ সালের দাখিলকৃত বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাবের সঠিকতা যাচাইয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য দপ্তরের দুই জন সহকারী পরিচালক মো. সোহেল আজিম ও ইউসুফ আহমদ চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদ্বয় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্তে মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিক্সা, মিশুক ও সিএনজি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নং. চট্ট-২৩৫৯) এর ২০১৮ সালের দাখিলকৃত রিটার্নের সঠিকতা যাছাইয়ের জন্য এ দপ্তরের গত ২২/১২/২০১৯ তারিখের পত্রের মাধ্যমে ২৩৫৯ এর প্রধান কার্যালয়ে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী তারিখে সরেজমিনে তদন্ত করেন। তদন্তকালে সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
দাখিলকৃত ২০১৮ সালের রিটার্নে আয় দেখানো হয় ৫১,৩২,১৫০ টাকা এবং ব্যয় দেখানো হয় ৫১,২০,১৫০ টাকা। তদন্তকালে আয়ের স্বপক্ষে চাঁদা আদায়ের রশিদসহ চাঁদা দাতা সদস্য তালিকা বহি তারা প্রদর্শন করতে পারেননি এবং ব্যয়ের পক্ষে প্রদর্শিত ভাউচারাদিসহ সভার নোটিশ, সভার কার্যবিবরনী, ক্যাশ রেজিস্টার কাগজে সৃজনকৃত বলে প্রতীয়মান হয়।
পরে ১৩ জানুয়ারী ২০২০ইং তারিখে অধিকতর তদন্তের জন্য ইউনিয়নটির শ্রীমঙ্গল শাখার আওতাধীন সিন্ধুরখান ও হবিগঞ্জ রোড অফিসে সরেজমিন তদন্ত করে তদন্ত কমিটি। তদন্তে ইউনিয়ন কর্তৃক চাঁদা সংগ্রহের রশিদ পাওয়া যায়।
তদন্তকালে জানা যায় ইউনিয়নে মৌলভীবাজার জেলার ৭ টি উপজেলায় কম-বেশী ৯০টি রোডে কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়নের ১৭ হাজার সদস্যের কাছ থেকে প্রতিদিন রশিদ বহির মাধ্যমে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। উক্ত আদায়কৃত ২০ টাকা হতে ইউনিয়নের জেলা কমিটি ৩ টাকা পায়। সে অনুযায়ী প্রতিদিন জেলা কমিটির আয় প্রায় ৫১হাজার টাকা এবং বছরে ১কোটি ৮৬লক্ষ ১৫হাজার টাকা। ইউনিয়নের দাখিলকৃত ২০১৮ সালের রিটার্নে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ প্রদর্শন করা হয়নি। যা অর্থ আত্মসাৎ এর অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে তদন্তে প্রতীয়মান হয়।
এছাড়া ইউনিয়নের দাখিলকৃত রিটার্নে সদস্য চাঁদা হতে বছরে ৫১,৩২,১৫০ টাকা আয় হয়েছে উল্লেখ করা হলেও উক্ত টাকা ব্যয়ের উপযুক্ত কোন ভাউচারাদি প্রদর্শন করা হয়নি। ব্যয়ের স্বপক্ষে কোন রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করা হয় না মর্মে সরেজমিন তদন্তে নিশ্চিত হয় তদন্ত কমিটি।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা অটো টেম্পু, অটোরিক্সা, মিশুক ও সিএনজি পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম জানান, এটি একটি মিথ্যা বানোয়াট ও পরিকল্পিত ঘটনা। সাধারণ শ্রমিকের সমর্থন তাদের সাথে রয়েছে।