‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ থেকে ‘শাহ ভিলা’ : সিলেট কেন জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানা?
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২০, ৩:০০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
দেশে জঙ্গি তৎপরতার জন্য বারবার আলোচনায় এসেছে সিলেটের নাম। জঙ্গিদের হামলায় একাধিকবার কেঁপে ওঠেছে এই অঞ্চল। দেশের শীর্ষ জঙ্গিরাও গ্রেপ্তার হয়েছে সিলেট থেকে। এছাড়া এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জঙ্গিরা ঘাঁটি গড়ে তোলার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন সময়।
জঙ্গি আস্তানা হিসেবে সিলেট প্রথম আলোচনায় আসে ২০০৬ সালে। সিলেটের টিলাগড় এলাকার শাপলাবাগের ‘সূর্য্য দীঘল বাড়ি’র কথা অনেকের নিশ্চয়ই মনে থাকবে। আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০০৬ সালের ২ মার্চ এই ভবনটি থেকে সপরিবারে আটক করা হয়েছিল জেএমবি নামক জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রহমানকে। ওই বছরের ১ মার্চ মধ্যরাতে সিলেটের উত্তরপ্রান্ত শাপলাবাগ এলাকার ‘সূর্যদিঘল বাড়ি’ নামের একটি একতলা বাড়িতে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি’র) শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান রয়েছেন সংবাদে বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর একটি দলও অংশ নেয় এই অভিযানে। ২ মার্চ সকালে বাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসেন শায়খ রহমানের স্ত্রী-সন্তানরা। এরপর আত্মসমর্পণ করেন আবদুর রহমান। তাকে আটকের পর সূর্য দীঘল বাড়ি থেকে ছোট আকারের একটি বোমা, দুই কেজি অ্যালুমিনিয়াম, কয়েকটি বই, ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও পারিবারিক ছবি উদ্ধার করা হয়। ২০০৭ সালে ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় ফাঁসি হয় আবদুর রহমানের।
‘সূর্য্য দীঘল বাড়ি’ থেকে শায়খ রহমানকে বের করে আনতে সময় লেগেছিল ৩ দিন। র্যাব বাড়িটিকে ঘেরাও করে রেখেছিল আটাশে ফেব্রুয়ারি থেকে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সবাইকে জীবিতই আটক করা গিয়েছিল।
২০০৬ সালে সিলেটের ওই অভিযানকেই মনে করা হয় বাংলাদেশের প্রথম বড় ধরণের জঙ্গিবিরোধী অভিযান, যেটা চলেছিল কয়েকদিন ধরে এবং সফলতা পেয়েছিল পুলিশ। সেবার শায়খ রহমানকে পরিবারের সব সদস্য-সহ বের করে আনতে প্রয়োগ করা হয়েছিল গ্যাস। ‘সূর্য্য দীঘল বাড়ি’র ছাদ ফুটো করে ক্যামেরা ঢুকিয়ে ভিতরের কর্মকাণ্ড অবলোকন করেছিল র্যাব সদস্যরা। সেবারের সেই অভিযান আধুনিক যোগাযোগ যন্ত্রপাতির কল্যাণে টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছিল সারা বাংলাদেশের মানুষ।
ওই ঘটনার এগারো বছর পর সেই শাপলাবাগ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আরেক বাড়ি ‘আতিয়া মহলে’ একই রকম কয়েকদিন ব্যাপী আরেক জঙ্গি বিরোধী অভিযান দেখে সিলেটবাসী এবং বিশ্ববাসী।
‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ ঘটনার ১১ বছর পর ২০১৭ সালের মার্চে নগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার ‘আতিয়া মহল’ নামের আরেকটি ভবনে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অবনে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। ১১১ ঘন্টার টানা ওই অভিযানে চার জঙ্গির নিহতের খবর জানায় সেনাবাহিনী। আর অভিযান চলাকালে ভবনের বাইরে দুটি বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হন ছয় জন।
কেন জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানা সিলেট : ২০০৪ সালে ১২ জানুয়ারি সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন ৭ জন, একই বছরের ২১ মে একই মাজারে তৎকালনি ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গ্রেণেড নিক্ষেপ করা হয়, ওই বছরের ৭ আগস্ট সিলেটে গুলশান হোটেলে মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও সিলেটে বেশকয়েকদফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তদন্তে এসব বিস্ফোরণের সাথে জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলে। সিলেটে শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনাও ফাঁস হয়।
শায়খ আব্দুর রহমানের পর সিলেটে আবার সন্ধান মিললো জঙ্গি আস্তানার। কেনো জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে ওঠছে সিলেট, এমন প্রশ্নের জবাবে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়া ও বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ না করার ফলে এমনটি ঘটতে পারে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে তাদের আশ্রয়দাতা এবং রাজনৈতিক যোগসাজশও থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের।
জঙ্গি সন্দেহে নতুন করে ৫জনকে আটকের বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কেউ কথা বলতে চাননি।
তবে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, সিলেট থেকে যে নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্য আটক করা হয়েছে তারা পল্টনে বোমা বিস্ফোরণও ঘটনাতেও জড়িত ছিল।
তিনি জানান, রোববার রাতে নগরীর মিরাবাজারের উদ্দিপনের ৫১ নম্বর বাসা থেকে নব্য জেএমবি’র সিলেট আঞ্চলিক কমান্ডার ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাইমুজ্জামানকে আটক করা হয়।
পরে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের বিশেষ একটি দল মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত নগর ও নগরের উপকন্ঠের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আরও চার জনকে আটক করে।