মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্ট : কারণ ছাড়াই বন্ধ করতে চান ডিসি!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ আগস্ট ২০২০, ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে:
প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম স্বনামধন্য পাঁচতারকা মানের দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মৌলভীবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মীর নাহিদ আহসান। গত সোমবার দুপুরে আগামী ৬ই আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি ও মৌখিক নির্দেশনা দেন তিনি। কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হঠাৎ করে তার এমন সিদ্ধান্তে হতভম্ব হোটেল কর্তৃপক্ষ। করোনায় দীর্ঘ লকডাউন শেষে বন্ধ প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ৩১শে জুলাই খোলার সঙ্গে সঙ্গেই তার এমন হুশিয়ারিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সরকারকে বড় অঙ্কের ভ্যাট প্রদানকারী ও বিদ্যুৎ বিল প্রদানকারী এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় দু’ শ্রমিক। জেলা প্রশাসকের হুশিয়ারিতে শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
দুসাই রিসোর্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ৩১শে জুলাই ঈদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। খোলার সঙ্গে সঙ্গে ঈদের ছুটির চারদিনে প্রচুর বুকিং পায়।
হোটেল খোলার ব্যাপারে সরকার বা পর্যটন মন্ত্রণালয় কোনো প্রকার নির্দেশনা পালনের বাধ্যবাধকতার কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি যা জেলা প্রশাসকের তামিল করতে হবে। যে কারণে কিসের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক অনুমোদনের কথা বললেন এবং প্রস্থানকালে ৬ই আগস্ট হোটেল বন্ধ করতে বলে গেলেন তা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বোধগম্য নয়।
অনুসন্ধানে জানা যায় যে, নবাগত জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান রিসোর্টটির প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলায় সপরিবারে অবস্থানরত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে রিসোর্টে আগমন করেন। তাকে রিসোর্টের রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা অভ্যর্থনা জানানোয় তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। তাৎক্ষণিক তিনি দায়িত্বরত কোনো ব্যবস্থাপককে তলব করলে রিসোর্টের উপ-অর্থ ব্যবস্থাপক তার সঙ্গে সাক্ষাতে এগিয়ে আসেন। তাৎক্ষণিক তিনি তাকে একজন সাধারণ কর্মকর্তা দিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিরুক্তি প্রকাশ করেন। তখন তাকে অবহিত করা হয় রিসোর্টটির কোনো জেনারেল ম্যানেজার নেই এবং অভ্যর্থনা বিভাগের ম্যানেজার যোগদান করেননি এবং তার ওপর রিসোর্টের প্রায় ২০০ জনবলের মাত্র অর্ধেক জনবল দিয়ে পরিচালনা শুরু করেছে। তাই কোনো ম্যানেজার তাকে অভ্যর্থনা প্রদান করতে পারেনি বলে উপ-অর্থ ব্যবস্থাপক ক্ষমাপ্রার্থী হন। তখনই জেলা প্রশাসক প্রশ্ন করেন তারা কীভাবে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া হোটেল খুললেন। জবাবে উপ-অর্থ ব্যবস্থাপক বলেন, রিসোর্ট খোলার জন্য জেলা প্রশাসকের যে অনুমোদন প্রয়োজন, এই ধরনের কোনো প্রজ্ঞাপন তো পর্যটন মন্ত্রণালয় দেয় নাই এবং জেলা প্রশাসকের দপ্তর হতে এরকম কোনো নির্দেশনাও প্রদান করা হয়নি। তাছাড়া দেশের কোথাও হোটেল বা রিসোর্ট খোলার পূর্বে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন প্রয়োজন এই বিষয় তারা শুনেনওনি। দেশে লকডাউন ৩১শে মে শেষ হওয়ার পর সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যার যার মতো করে খুলেছে এবং দুসাই রিসোর্ট লকডাউন শেষে পুরো দুই মাস পর খোলা হয়েছে। অতএব, জেলা প্রশাসক কিসের অনুমোদনের কথা বলছেন তা তাদের নিকট একেবারেই বোধগম্য নয়।
জেলা প্রশাসকের এহেন উদ্ভট আচরণ মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কামাল আহমদকে জানানো হলে তিনি এই বিষয়ে অতি দ্রুত জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে রিসোর্টটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসের রহমানকে আশ্বস্ত করেন।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পাঁচ তারকামানের দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মৌলভীবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সঙ্গে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন- পরে ফোন দেবেন বলে লাইন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পেশাগত পরিচয় ও প্রশ্নের বিষয় জানিয়ে তার অফিসিয়াল মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিলেও তিনি আর ফোন দেননি। কিংবা ওই খুদে বার্তার কোনো উত্তরও দেননি। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্যও জানা হয়নি।
এই বিষয়ে রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসের রহমানকে ফোন করলে তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি তার কার্যালয়ে এক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি সত্য এবং জেলা প্রশাসকের উচ্চস্বরে রিসোর্টের কর্মকর্তাদের ধমকের আওয়াজ শুনে তিনি দ্রুত অভ্যর্থনা হলে পৌঁছানোর আগেই জেলা প্রশাসক গাড়িতে উঠে চলে যান। জেলা প্রশাসকের এহেন হুমকির বিষয়ে তিনি জানান, নবাগত জেলা প্রশাসক খুব সম্ভবত তার ক্ষমতার এখতিয়ার সমন্ধে অবগত নন এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে এইরূপ হুমকি-ধামকি দিয়ে গেছেন। রিসোর্ট খোলার পূর্বে জেলা প্রশাসকের কোনো অনুমোদনের বিষয় নেই এবং কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতাও জেলা প্রশাসকের নেই। এই বিষয়ে আইনি উপদেশে তিনি কোম্পানির আইন উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন এবং নবাগত জেলা প্রশাসকের কোনো প্রকার হঠকারী কার্য আইনের মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে বলে তিনি জানান। তাছাড়া জেলা প্রশাসক কোন ক্ষমতাবলে এইরূপ হুমকি প্রদান করে গেলেন তার ব্যাখ্যা লিখিতভাবে তার কাছে চাওয়ার নিমিত্তে তাকে শিগগিরই পত্র প্রেরণ করা হবে। সুত্রঃ মানবজমিন