বিলীন হচ্ছে প্রাচীন শিল্প: কামারপল্লীতে হতাশা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০২০, ১১:২৪ অপরাহ্ণ
বালাগঞ্জ প্রতিনিধি:
পবিত্র ঈদুল আযহার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসলেও ব্যস্ততা নেই কামারপল্লীর কর্মকারদের। কোরবানির পশু জবাইয়ের উপকরণ তৈরি কাজে থাকা কামাররা দিনের অনেকটা সময় অলস পার করছেন। অথচ প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় আসলে ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা। করোনাকালে এবারের ঈদে ভিন্ন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে কামারদের দোকানগুলোতে। নাই আগের মত ভিড়, এমনকি সাড়া দিনেও অর্ধহাজার টাকাও হয়না।
বৈশ্বিক এই মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে একদিকে কমেছে ক্রেতার সংখ্যা পাশাপাশি কাঁচা মালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নামমাত্র লাভে বিভিন্ন কোরবানির পশু জবাইয়ের সামগ্রী বিক্রি করতে হচ্ছে। উপার্জন কমে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাছেন তারা।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকার রয়েছে। কুরবানি ঈদের মৌসুমে দা, ছুরি, বটি, খান্ডাসহ কোরবানির পশু জবাই করার সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা। এই সময় এসব উপকরণ ক্রয়ে ভিড় লেগে থাকত তাদের দোকানগুলোতে।
সারাবছর খুব ভাল না কাটলেও এ সময়টাকে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতেন। তবে এইবার (কোভিড-১৯) করোনার কারণে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। নেই তেমন ব্যস্ততা, কমে গেছে কাজের পরিধি। শুধুমাত্র দা, বটি, খান্ড সান দেওয়া ছাড়া নতুন সামগ্রী তৈরির চাহিদা নেই বললেই চলে।
বালাগঞ্জ বাজারের শংকর দে, জগন্নাথ দে, সুরেন্ড কুমার দে, রামটন্দ্র দে, মাধন চন্দ্র ধর, রমেশ চন্দ্র ধর কর্মকাররা জানান, কোরবানির সামগ্রী তৈরীর কাঁচা মালসহ কয়লা ও লোহার দাম বেড়েছে। তেমন চাহিদা না থাকায় এসব পন্য তারা সীমিত লাভে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এখানে ১শ’ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় হাজার টাকার বিভিন্ন কোরবানির পশু জবাইয়ের সামগ্রী রয়েছে।
পরিবার পরিজনদের নিয়ে বড়ই দুঃচিন্তায় রয়েছেন বলে জানান তারা। ধার-দেনা করে ব্যবসা ধরে রাখলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন কর্মকাররা।
অধীর চন্দ্র দে কর্মকার জানান, ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি আয়ের আশা করলেও কাঙ্ক্ষিত কাজ না থাকায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন শত কর্মকারেরা।
রঞ্জিত দে কর্মকার বলেন, করোনার প্রভাবে রোজগার কমে যাওয়ায় নিজের পরিবারের ভরণ পাশাপাশি কারিগরদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আগে কম পুঁজি দিয়ে এ ব্যবসা করেছি। কিন্তু এখন বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা করতে হচ্ছে।
সর্বপরি বলা যায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বর্তমানে প্রায় সহজলভ্য আধুনিক সব যন্ত্রপাতির কারণে এই প্রাচীন একটি শিল্প হারিয়ে যেথে চলছে।