আলোচিত সেই সাহেদের শশুর বাড়ি সিলেটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০২০, ৩:৪৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মহামারি করোনার সার্টিফিকেট জালিয়াতিতে জড়িত ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতলের পরিচালক বহু অপকর্মের মূল হোতা মো. সাহেদ করিম দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন সিলেটে। র্যাব-পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এলো আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেটে করেছেন দ্বিতীয় বিয়ে। তার ২য় শশুরবাড়ি সিলেটে।
তার স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মির পৈত্রিক বাড়ি সিলেট নগরের ২৭ নং ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ও সিলেট মেট্রোপলিটনের মোগলাবাজার থানাধীন পাঠানপাড়ায়।
সাহেদ করিমের ২য় স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মির পিতা ইয়াসিন আরাবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটে হলেও চাকরির সুবাধে ঢাকায় স্থায়ী হওয়ায় সিলেটের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিলো না রিম্মি বা তার পরিবারের। ইয়াসিন আরাবি ছিলেন সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান।
ইয়াসিন আরাবির স্ত্রী- রিম্মির মা সাহিদা আরাবি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক। তাদের ২ কন্যা সন্তান- রিম্মি ও শাম্মী। স্বামী ইয়াসিন আরাবি মারা যাবার কিছুদিন পর সাহিদা আরাবি ঢাকার এক শিল্পপতিকে বিয়ে করে তার পরিবারে চলে যান। তবে, দুই মেয়ে রিম্মি ও শাম্মী থেকে যান পিতা ইয়াসিন আরাবির বাসায়।
অপরদিকে, সাহেদ করিমের সঙ্গে পিঁড়িতে বসার আগে আরেকবার বিয়ে হয়েছিলো সাদিয়া আরাবি রিম্মির। সেই স্বামীর ঘরে সাদিয়ার এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। কিন্তু ওই স্বামীর সংসারে থাকা অবস্থাতেই প্রতারক সাহেদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠে সাদিয়ার। সাহেদের চলন, বলন ও সম্পদের মোহে পড়েন সাদিয়া। এরপর থেকে প্রথম স্বামীর সঙ্গে আর বনিবনা হচ্ছিলো না তার। কন্যাসন্তান রেখেই সাহেদের সঙ্গে সংসার পাতেন তিনি। ঢাকার বনানী ডিওএইচএস-এর ৪নং রোডের ৯নং বাসায় সাহেদ করিমের সঙ্গে থাকতেন রিম্মি।
জানা গেছে, সাহেদের শাশুড়ি সাহিদা আরাবি সংবাদ প্রযোজক হওয়ার সুবাদে বিটিভিতে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে সুযোগ পান স্ত্রী সাদিয়া আরাবি। করোনা সার্টিফিকেট জালিয়াতি ধরা পড়ার পর স্বামীর অপকর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে গণমাধ্যম ও প্রশাসনের কাছে দাবি করলেও উচ্চাবিলাসী সাদিয়া সম্পর্কেও পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।
সাহেদ করিমের সহধর্মীনী হওয়ায় সরকারের একেবারে শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পান সাদিয়া আরাবি রিম্মি। বিলাসবহুল জীবন উপহার পান সাহেদের কাছ থেকে, ছিলেন সাহেদের অনেক অপকর্মের প্রত্যক্ষদর্শী এবং অনুপ্রেরণাদাত্রী। কিন্তু, রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর বোল পাল্টে ফেলে স্বামীর শাস্তি দাবি করেন সাদিয়া।
সিলেটে সাদিয়ার পিতা ইয়াসিনের একমাত্র পৈত্রিক ভিটা ছাড়া আর কিছু নেই বলে জানা গেছে। সরকারির চাকরির কারণে ইয়াসিনের দিন কেটেছে ঢাকাতেই। তার মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়। গত সেটেলমেন্ট জরিপে দক্ষিণ সুরমার পাঠানপাড়াস্থ ইয়াসিন আরাবির সম্পত্তির একটি পুকুরসহ প্রায় দেড় কেদার ভূমি রেকর্ড হয় মেয়ে রিম্মি ও শাম্মীর নামে।
এদিকে, করোনার সার্টিফিকেট জালিয়াতি ধরা পড়ার পর সাহেদ করিমের ‘সিলেট কানেকশন’ খুঁজে পাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। আত্মগোপনে থাকা সাহেদ পালিয়ে আসতে পারেন সিলেটে- এমন সন্দেহে তার অবস্থান চিহ্নিত করতে প্রযুক্তির সহায়তায় জোর তৎপরতা চালাচ্ছে গোয়েন্দা বিভাগ। তাতে সহায়তা করছে সিলেটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বিপিএম আজ রোববার (১২ জুলাই) বলেন, আমাদের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। এমন কিছু ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো।
এদিকে, সাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে তদন্তকারী দল। হদিস মিলেছে তার বিরুদ্ধে আরও ২৩ মামলার। সর্বমোট ৫৬টি মামলার আসামি প্রতারক সাহেদ।
রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর গ্রেফতারদের মধ্যে রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার (১১ জুলাই) হাসপাতালটিতে ও রিজেন্ট কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে তদন্তকারী দল। অভিযানকালে গুরুত্বপূর্ণ আলামতসহ পাসপোর্ট জব্দ করে তারা।