আবারও প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জের হাওর, ফের বন্যায় বিপাকে জনজীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২০, ১০:২৭ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা :
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে প্রধান নদী সুরমা, সীমান্ত নদী যাদুকাটা, চলতি ও রক্তি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবারও প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জের হাওর জনপদ। প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে।
মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় বিপাকে পড়েছেন গ্রাম, শহরতলি ও শহরের মানুষ। অনেকেই গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন দুর্ভোগের মধ্যে।
শনিবার বিকালে সুরমা নদীর পানি সুনামঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ও যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রথম দফা বন্যার পানি নামার ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যার হানা। এর সঙ্গে রয়েছে করোনা ভীতি। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। জেলা সদর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে শতাধিক নালা (ঝরনা) দিয়ে উজান থেকে প্রবল বেগে বন্যার পানি নামছে ভাটিতে। এর সঙ্গে রয়েছে ভারি বর্ষণ।
জেলার প্রধান নদী সুরমার দু’কূল উপচে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে গ্রাম, শহর ও শহরতলিতে। বন্যার পানিতে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের ২০-এর অধিক স্থান তলিয়ে গেছে। পানিতে ভাসছে বসতভিটা, গবাদি পশু, পুকুরে মাছ।
প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যায় জেলার ৮৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৮৩টি ও ৪ পৌরসভার ১৮ ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে।
এ দিকে চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল হোসনে বলেন, দ্রুত সময়ের দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হওয়ায় মানুষ খুব দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। বন্যায় সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর, রঙ্গারচর, সুরমা, গৌরারং, মোহনপুর ও লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের মানুষজন আক্রান্ত হয়েছেন।
এর মধ্যে প্রবল বেগে ঢলের পানি নেমে আসার কারণে জাহাঙ্গীরনগর ও রঙ্গারচর ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ির মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষে আজ (শনিবার) আমরা সদর উপজেলার সব ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ করেছি। অগামীকাল আক্রান্ত এ সব ইউনিয়নে শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় পৌরসভার নবীনগর, ধোপাখালী, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, উকিলপাড়া, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া পশ্চিম হাজীপাড়া, এলাকাসহ ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চলীয় বাসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাটে পানি উঠেছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশ্রয়কেন্দ্রসহ যেখানে যা প্রয়োজন আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিব।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ১১টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের। ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি অবহিত করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, পাগাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে ফের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ভারতের মেঘালয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২৩ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সুরমা নদীর পানি সুনামঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ও যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্ভাবাস অনুয়ায়ী সুনামগঞ্জে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত ভারি থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।