কামরান ভাইর জন্য এলিজি
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০২০, ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
জাকির মোহাম্মদ:
আর আমরা কামরান ভাইয়ের বাসায় বসে আছি কিছু লোক
ঈদের দিন বিকাল ২০০৭ সাল আমরা বসে আছি,ভাইয়া বাইরে থেকে কিছুক্ষণ মাত্র রুমে ঢুকেছেন
ডুপ্লেক্স থেকে সিঁড়িতে দেখছি সৌম্য শৌখিন মানুষ
যার দরাজ হাসির প্রেমে পড়েছিলাম সেদিন
আর আমাদের হাসি মুখেই পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন
গ্রাম থেকে এসেছি শুনে খুশির উচ্ছল আলো যেন ঠিকরে পড়ছে চারদিক
কদমবুসি করতে গেলাম,ঝাপটে ধরলেন নেতার জন্য কদম
ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের বুক
অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখলেন
আমরা কথা বললাম,কুশল জিজ্ঞাসা করলাম
আর তিনি জানতে চাইলেন তখনকার মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কথা
জগন্নাথপুরের মানুষের কথা
সুহেল ভাই পটপট করে কামরান ভাইয়ের উত্তর দিচ্ছেন,সাথে আমরাও
তারপর নাস্তার প্লেট ঈদের দিনের সেমাই
আমরা খাচ্ছি,তিনি দেখছেন,কখনো হাসছেন,কখনো কথা বলছেন
আমাদের সাথে,আমাদের ঈদের দিনে দেখা করার জন্য অনেক অনেক দোয়া করলেন হাত তুলে
তারপর কতদিন গেছে
একবার স্বজন সমাবেশের বইপড়া উদ্ভোধন হবে
সেবার নায়ক ফারুক এসেছিলেন শহিদ মিনারে
আমরা দায়িত্বে আছি স্বজনদের সাথে আসা অভিভাবকের আর দর্শকের
আমরা অপেক্ষা করছি নায়ক ফারুকের
সেদিনও কামরান ভাই এসেছিলেন, গালটিপে বলেছিলেন-‘কিতা করোরে ভাই’
স্বজনদের ভীড়,নায়ক দেখার ভীড়, ভীড় বইপড়া মানুষের
সেদিনের সে বিকেলটিকে আজও মনে পড়ে অবিকল
আর তারপরের দিনগুলি ইতিহাস
ক্যাম্পাসে অর্থমন্ত্রী আসবেন আমরা নিরাপদ সড়কের ব্যানারে দাঁড়িয়ে আছি
সজিব,দিলোয়ার, সেফুল আরও কতশত শিক্ষার্থী
নেতারা আসলেন,সাথে আমাদের কামরান ভাই
তারপরের বার আসলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ
সেবারও হাতে মিলালেন স্টেজ বরাবর
আমরা বড় নেতাদের পাশে আমাদের ভাইকে খুব কাছ থেকে পেয়েছি
কামরান ভাইর সাথে কতশত স্মৃতির সমুদ্রে ভেসেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই
শহিদ মিনার,মুক্তমঞ্চ,অডিটোরিয়াম, জেলাপরিষদ, সিটিকর্পোরেশন হল রুম সবখানেই তিনি,তাঁর মিষ্টি হাসির অবয়ব
এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় আমি আর দিলোয়ার নাইওরপুল পয়েন্টে দাঁড়িয়ে
কামরান ভাইর গাড়ি জ্যামের জন্য দাঁড়ালো
সালাম দিলেই গ্লাস খুলে হাসি দিলেন-‘কিতা করোরে ভাই,ভিজিজিবায়নু,যাও তাড়াতাড়ি বাসাত যাও’
সত্যি সত্যি সেদিন খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছিলাম
ভাইয়ের হৃদয়ের নির্দেশ,উপেক্ষা করা কঠিন
আরেকবার করিমউল্লাহ মার্কেটের সামনে ইফতারের আগে আগে দেখা
তখন নামটি জেনে গেছেন,’জাকির ইয়া আল্লাহ ইফতারের সময় অইযার ইকানো কিতা করো,অউ নেও ইফতার’ একটি প্যাকেট হাতে দিয়ে গাড়ির গতি বাড়ালেন
আমাদের কামরান ভাই আর আমাদের হৃদয়ের লেনদেন এত কাছের
আর আজ আমরা একেবারে ক্লান্ত স্বজন হারা মানুষ
করোনা আমাদের এভাবে মরচে ধরা জাহাজের কংকাল বানাবে আমরা ভাবিনি কোনদিন
করোনায় মৃত্যুর খবর আমাদের শহরে বাজপড়া
হঠাৎ যেন আমরা হয়ে গেলাম একেবারে নির্বাক,বোবার মত
সোমবার আমাদের জন্য কাঁদবার দিন হয়ে এল আরেকবার,কেবল আমরা নই প্রকৃতিও কাঁদলো সারাদিন
আর ঝুমঝুম বৃষ্টির পরে মানিক পীরের টিলায় চির নিদ্রায় শায়িত হয়ে গেলেন আমাদের কামরান ভাই
করোনার ভেতর খসে গেলো আমাদের অনেক স্বপ্নের নক্ষত্র
সেদিন বেদনাতাড়িত হয়ে চোখের জল ক্রমশঃ ঝুলে পড়েছিল
সবুজ সবুজ ঘাসের ঢগায়
মনে পড়ে কামরান ভাই মনে পড়ে
—আপনি আমার হাত ধরেছিলেন
—আপনি আমার গাল টিপে ছিলেন
—আপনি আমাকে বুকে জড়িয়েছিলেন
এবার মানিক পীরের টিলায় আপনার জান্নাতি সময়ের কথা ভেবে ভেবে আজও প্রতিটি রাত গভীর হয়
আমাদের যে নিরহংকার মায়ায় আপনি বুকে জড়িয়েছিলেন আপনাকেও যেন জান্নাতের সে উঁচু স্তর মায়া করে জড়িয়ে রাখে
অতুল স্মৃতির দিন উড়ে গেলেও আমাদের স্মৃতির সমুদ্রে আপনি চিরজাগরুক থাকবেন,বুকের স্পর্শে প্রতিদিন।