নবীগঞ্জে অস্ট্রেলিয়া ফেরত স্ত্রীর মামলায় স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ গ্রেফতার ৪
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২০, ১০:৪২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তার স্ত্রীকে নিয়ে দেশে আসার পথে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ত্রীকে একা রেখে পাসপোর্টসহ স্বামী পলায়ন করে।
এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় সোমবার অস্ট্রেলিয়াফেরত স্বামী ধনঞ্জয় দেব (৩০), তার বাবা ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব (৬৫), তার মা মিনতি দেব (৫৫), ভাই দিপক দেবকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে ওই দিনই গ্রেফতারকৃতদের হবিগঞ্জ আদালতে প্রেরক করলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ পৌরসভার গয়াহরি গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্র দেবের সঙ্গে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিয়ে হয় উপজেলার বদরদী গ্রামের বাসিন্দা হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেবের কন্যা অনুস্মিতা দেব অনুর। বিয়ের পর ধনঞ্জয় দেব ও তার পরিবার অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে স্ত্রী অনুর কাছে।
তার আংশিক দাবি মানার পর বিগত ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নববধূকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেন ধনঞ্জয় দেব। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী ঊভয়ই সুখী জীপনযাপন করছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরই আসল চেহারা ধরা পড়ে ধনঞ্জয় দেবের। প্রায় প্রতিনিয়ত নানা অজুহাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে তার স্ত্রীকে।
অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা করার কথা বলে পিতার কাছ থেকে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে আনার চাপ দেয় অনুস্মিতাকে। স্বামীর কথায় রাজি না হওয়ায় অনুস্মিতা দেবের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
ঘটনাটি অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনকে জানালে সুচতুর ধনঞ্জয় দেব গত ১৭ মার্চ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসার পথে বিমানবন্দরে স্ত্রীকে একা রেখে স্বামী ধনঞ্জয় দেব অনুস্মিতার পাসপোর্ট, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, লাগেজসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
স্বামী ধনঞ্জয় দেবের মোবাইলের সুইচ অফ থাকায় বাধ্য হয়ে ফোন দেন অনুর বাবা-মাকে। একপর্যায়ে বিমানবন্দরে স্থাপিত কোয়ারেন্টিনে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শেষে পরদিন দুপুরে ভাই ও মাকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গয়াহরি গ্রামে আসেন স্ত্রী অনুস্মিতা দেব।
কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ঘরে না তুলে গেটে তালাবদ্ধ করে রাখে। বারবার আকুতি জানানোর পরও শ্বশুরবাড়ির লোকদের মন গলেনি। বাধ্য হয়ে অনু ঘরে ঢুকার চেষ্টা করলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠে।
খবর পেয়ে পুলিশ, এলাকাবাসী, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তবে পুত্রবধূকে ঘরে না তোলে শেষ পর্যন্ত পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় স্ত্রী অনুস্মিতা দেবের মা সঞ্চিতা ধর বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক ধনঞ্জয় দেবের ছোট ভাই দিপংকর দেবকে গ্রেফতার করে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাশ জানান, মামলার অপর আসামিরা বাড়িঘর ছেড়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের ৪ জনকে উপজেলার সৈয়দপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।