করোনায় নেপথ্যের যোদ্ধাদের “জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ”
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২০, ৯:৩২ অপরাহ্ণ
ফারজানা মৃদুলা:
বৈশ্বিক ভয়াবহ মহামারীর অশুভ শক্তি যেন আমাদের পিছু ছাড়তেই চাইছেনা। ২ মাস হতে চললো করোনাভাইরাস সংক্রামন এর রোগীর তালিকায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। এমন ভয়ানক পরিস্থিতির মাঝে করোনার নেপথ্যের যোদ্ধাদের অবস্থা যেন “জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ”।
ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সবসময় তাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহিতা দিতে হয়এটাই নিয়ম। কত জন ডাক্তার ভিজিট হলো কতজন তাদের ঔষধগুলো লিখলো, ফার্মেসীতে টার্গেট ফিলাপ ইত্যাদি সব মিলিয়ে এভাবেই মাসের ইতি টানতে হয়। সফল ভাবে ইতি করলে সন্তুষ্ট কর্তৃপক্ষ।এটাই স্বাভাবিক।
আমরা নিজেরাও হয়ত দেখেছি কম বেশী ডাক্তার এর চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রই ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের তোড়জোর পড়ে হাতের প্রেসক্রিপশনটি দেখার জন্য।এতে তাদের কোম্পানির ঔষধ লেখা হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য।
আমরা বেশ বিরক্তিকর বোধ করি সেই সময়টা আসলে। কিন্তু আমরা এটা মনে করি না,বা তখন সেই পরিবেশ ও থাকে না যে আমাদের এই কথা ভাবার তারা তাদের চাকরি বাঁচাতে এমনটা করে হয়ত বা।
এই করোনাভাইরাস এর কঠিনতম ক্ষনে তারা কিন্তু নিজেদের জীবন বাজী রেখে আমাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারা যদি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতো তাহলে আমরা জরুরী ঔষধ সরবরাহ কি করে পেতাম?
করোনার নেপথ্যের এই যোদ্ধারা নিরলস ভাবে কাজ করে চলছে। এই মহামারীর কালে তাদের কথা কিন্তু কেউ চিন্তা করেনি। তাদের জন্য কোন সহায়তার হাত ও কেউ প্রসারিত করেনি।অথচ তারাও কিন্তু ঝুঁকির মাঝে কাজ করে চলছে।
বিশ্বতসুত্রে জানা গেলো এই করোনা সংকটকালে তাদের টার্গেট ফিলাপ এর দোহাই দিয়ে তাদের কর্তৃপক্ষরা ছাটাই প্রত্রিয়া শুরু করেছেন।এর তালিকা থেকে কোম্পানির ছোট থেকে বড় পদের প্রতিনিধিরা কেউ বাদ পড়ছেন না।
এ কেমন আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত এই ভয়াবহ দিনে।
তারা এখন কি করবে? কি করে চলবে তাদের পরিবার।এমনও হতেপারে কোন কোন পরিবারের সে একজন্ই উপার্জনকারী এবং ছাটাই প্রক্রিয়া থেকে ঐ লোকটি ও বাদ পরেছেন। এছাড়া এ সময়ে তো কোন নতুন চাকরি তাদের খুঁজে নেওয়া সম্ভব নয়।
এমন আচরন এই সময়ে তাদের সাথে করা সমিচীন নয়। করোনাভাইরাস এর কারনে গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে, তারা তো এমন অবস্থায় সঠিক পার্ফমেন্স দেখাতে পারবে না, এটা আপনারা জেনে ,বুঝেও এমন সিদ্ধান্ত কি করে নিচ্ছেন? আজ আপনাদের সকল প্রতিনিধিরা যদি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয় তখন কি করবেন?
মনে রাখবেন
“ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়”।
তাই এই বিপদকালে আপনারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষরা এমন সিদ্ধান্ত পরিহার করুন।অমানবিক সিদ্ধান্ত ত্যাগ করে এই ক্রান্তি কালে আপনারাও বিবেককে জাগ্রত রাখুন।
অন্যদিকেমএই ঔষধের ফেরীওয়ালারা পাচ্ছেনা কোন সরকারী কিংবা বেসরকারি সহায়তা মোট কথা তাদের কথা কেউ ভাবছেই না তারপরও কোন অভিযোগ নেই তাদের।তারা জানে কি করে মানবতা প্রদর্শন করতে হয় তাই এই সময়ে নিজেদের না গুটিয়ে গ্রাম থেকে শহরের অলিগলিতে ছুটে চলছে বিরামহীন ভাবে।
তারা এখনও আশা করে তাদের সাথে এমন বিরূপ আচরন করা বন্ধ হবে।তারা পাবে সম্মান এতটুকুই চাওয়া তাদের।
তবে আমরা সকলেই আশা করবো, এই করোনা ভাইরাস যেমনভাবে পুরো বিশ্বকে একসাথে আক্রমণ করেছে, তেমনি যেন পুরো বিশ্বকে একসাথে সব অশুদ্ধি কে শুদ্ধ করে ভালোর জন্য বদলে দেবে আমাদের। মানুষ যেন তাদের ভুলবুঝতে পারে।সবার মনে যেনো মানবতার মূল্যবোধ তৈরী হয়।
লেখক: কলামিস্ট