সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ নিধনের মহোৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২০, ১১:১৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট পাখি ও মৎস্য অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্থবে এর চিত্র ভিন্ন।
আইন অনুযায়ী ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারী ও কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এই অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই মনে করেছেন না হাওর পাড়ের জেলে ও কৃষকরা।
তাই টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেই কোনো পদক্ষেপ।
গত দু-দিন ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরের মূল অভয়াশ্রম লেউচ্চামারা, রুপাবই, হাতিরগাতা, তেঘুনিয়া, বেরবেরিয়া ও রৌয়াতে চলছে ডিমওয়ালা মা মাছ নিধন। এটি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল।
আম্ফানের প্রভাবে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রতি বছরের মত এবারো হাওরে পানি প্রবেশ করায় সবাই সদল বলে মহাসমারোহে মাছ ধরছে জেলেরা। একে স্থানীয় ভাষায় উইয্যা বলে। অথচ এই সময়টা মাছের প্রজননকালীন সময়। কঠোর নজরদারী না থাকায় স্থানীয় জেলেরা অবাধে মাছ ধরছে। আর এখন ধরা পড়ছে সব ধরনের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ।
মৎস্য আইনে ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পোনামাছ ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন করা যাবে না। যদি কেউ এ আইন অমান্য করে মৎস্য নিধন করে। তাহলে অর্থদণ্ড ও জেল জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে। কিন্তু এর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বাস্থবে দেখা যায় নি।
এদিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি এবং রামসার স্থান টাঙ্গুয়ার হাওরসহ তাহিরপুর উপজেলার ছোট বড় বিভিন্ন হাওরে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করছে। এ বছর হাওরে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দলবদ্ধভাবে অবৈধ কারেন্ট জাল, কোনাজাল, ছাই ও উড়াল জাল দিয়ে এখন অবলীলায় চলছে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনের মহোৎসব।
দেশীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এটা বন্ধ হওয়া জরুরি। যদি প্রতি বছর আইন মেনে হাওরে মাছ ধরা হয় তবে মিঠা পানির মাছের কোনো অভাব পড়বে না আর না হলে মৎস্য রাজ্যে, মৎস্য বংশ চিরতরে শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সচেতনতা মহল।
হাওর পাড়ের বাসিন্দা সাবজল আহমেদসহ অনেকেই জানান, একটা সময় ছিল জেলে ও কৃষকেরা শখের বসে স্বল্প আকারে পোনা মাছ ধরত। আর এখন পোনা ও ডিমওয়ালা সব ধরণের মাছ নিধনের মহোৎসব চলছে। তাই এই সময় প্রশাসনের পক্ষ কঠোর নজরদারী ও পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনে মৎস্য আইন প্রয়োগ করলে মাছের বংশ বৃদ্ধি করা সহজ হত। আর বেড়িবাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকলে স্রোত তৈরি হলে রুই, ঘনিয়াসহ বিভিন্ন মাছ ডিম ছাড়বে।
পানির স্রোত না থাকলে মাছ ডিম ছাড়তে পারে না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউপির ইন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য অখিল তালুকদার জানান, এমনিতেই হাওরে কমছে দেশীয় মাছের সংখ্যা। আর প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ শতাধিক জেলে টাঙ্গুয়ার হাওরে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ ধরে। আর এভাবে যদি চলতে থাকে তবে হাওরের মাছ বিলুপ্ত হতে বেশি দিন লাগবে না।
শ্রীপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, ইউএনও, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সমন্বয়ে হাওরে এখনিই অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে মাছের বংশ রক্ষায় পোনা ও মা মাছ নিধনে বন্ধে কঠোর নজরধারী রাখতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, মৎস্য নিধন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। কোনো অন্যায়কে ছাড় দেয়া হবে না।
তাহিরপুরের ইউএনও বিজেন ব্যানার্জি বলেন, যেসব জেলে সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে দেশের সম্পদ নষ্ট করে মৎস্য নিধন করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।