কুলঞ্জ ইউনিয়নে ২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তার তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২০, ৯:১৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত আড়াই হাজার টাকা সহায়তা কার্যক্রমে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নে উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুতে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ৯৪০ পরিবারের এই তালিকায় রয়েছে অনেক বিত্তশালী এবং জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজনের নামও।
অনিয়মের ফলে অনেক অসচ্ছলের প্রণোদনা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। জাতির সংকটময় মুহূর্তে বিপাকে পড়া মানুষদের তালিকায় এই অনিয়ম অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। এ নিয়ে উপজেলা জোরেই সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। উপকারভোগীরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
জানা গেছে, দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নে ৯৪০ টি পরিবার পাচ্ছে নগদ আড়াই হাজার করে সরকারি অর্থ সহায়তা। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের নিকট তালিকা জমা দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের হতদরিদ্ররা অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের নাম দিয়েছেন, এদিকে ০১ নং ওয়ার্ডে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকা ক্রমিক নং ৮২ ছায়াদ মিয়া চৌধুরী অত্র ওয়ার্ডের ইউ/পি সদস্য চান মিয়া চৌধুরীর আপন ভাই, তবে ইউ/পি সদস্যের দাবি তিনি বহুদিন ধরেই আলাদা থাকেন।
কুলঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান তালুকদারের বোন ক্রমিক নং ৬৯৮ মোছাঃ জাহানারা বেগম স্বামী মৃত মজনু মিয়া, বোনের দুই ছেলে ক্রমিক নং ৬২৭ হুমায়ুন আহমেদ পিতা মৃত মজনু মিয়া, ক্রমিক নং ৭১২ আল মামুন, পিতা মৃত মজনু মিয়া। তবে চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান তালুকদার বলেছেন তারা প্রত্যেকের’ই আলাদা পরিবার আছে।
৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী সদস্য স্বামী, এবং সন্তান, মা, আপন ভাই, ভাইয়ের বউ, সহ মোট ৬ জনের তালিকায় লিপিবদ্ধ করেছেন, তবে সংরক্ষিত এই নারী সদস্য ডলি বেগম বলেন আমি আমার ছেলের নাম দেইনি, কিভাবে সেই নাম আসলো আমি জানি না, তালিকায় দেওয়া এই মোবাইল নাম্বারটি আমার ছেলের নয়। তবে বাকী সদস্যের নাম দেওয়ার কথা তিনি স্বীকার করে বলেছেন তারা ত আমার পরিবারের নায়, আমার বাবার বাড়ির তারা আমার পরিবারের হয় কিভাবে। এ ছাড়া, তালিকায় যুক্ত হয়েছেন অনেক বিত্তশালী ও জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়-স্বজনের নাম।
ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে হ-য-ব-র-ল অবস্থা অত্র ওয়ার্ডের ইউ/পি সদস্য আছাদ চৌধুরী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন আপন ভাইকেও ক্রমিক নং ৩৭৪ আসরাফ চৌধুরী, এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীর ভাই ইমরান চৌধুরী ক্রমিক নং ৩৬৬, শুধু তাই নয় ক্রমিক নং ৩৭৫ ফয়সাল চৌধুরী এবং ক্রমিক নং ৩৮৭ ফেরদৌস চৌধুরী একই পরিবারের আপন দুই ভাই, এমন আরও অসংখ্য বিত্তবানরা ও রয়েছেন এই তালিকায় এমন অভিযোগ করে অত্র ওয়ার্ডের বরইতিয়র গ্রামের হতদরিদ্র কয়েক পরিবার জানান, ৫ নং ওয়ার্ডে ৭০ ভাগ গরীব এলাকা আমাদের গ্রাম অথচ মেম্বার আমাদেরকে না দিয়ে নিজের গ্রামে সকল বিত্তশালীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
অত্র ওয়ার্ডের ইউ/পি সদস্য আছাদ চৌধুরী নিজের ভাই এবং সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের নাম দেওয়ায় ভুল স্বীকার করে বলেন বাকী যারা আছে তারা তা পাওয়ার যোগ্য বলে তিনি মনে করেন।
উক্ত ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে রয়েছে অনেক গরমিল, ক্রমিক নং ৪৪৬, ৪৪৮, ৪৫০, ৪৫২, ৪৫৪ তাদের নামের সাথে গ্রামের মিল নেই, খোজ নিয়ে যানা যায় ক্রমিক নং ৮৪৫ শাহ সুলতান আপন ভাই লন্ডন প্রবাশী, ক্রমিক নং ৮৭২ মোঃ আলী, দুই ছেলে বিদেশি এবং নিজ গ্রামের অন্যতম প্রভাবশালীও তিনি, আপন দুই ভাইও ক্রমিক নং ৯৩৫ কবির মিয়া, পিতা চান মিয়া, ক্রমিক নং ৮৬৭ জয়নাল মিয়া, পিতা চান মিয়া, ক্রমিক নং ৮৫৪ রাহেনা বেগম, স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী নুরুজ্জামান, রাহেনা বেগম বলেন আমি জানতাম না আমার নাম এই তালিকায় দেওয়া হবে, আমাদের গ্রামের আকলিছ মিয়া আমার আইডি কার্ড এবং মোবাইল নাম্বার নিয়েছিলেন।
আকলিছ মিয়া বলেন আমাকে চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন ১০ টি নাম দেওয়ার জন্য তাই আমি দিয়েছি, যে ১০ জনের নাম দিয়েছেন তারা এই তালিকা পাওয়ার যোগ্য কিনা তা জানতে চাইলে তিনি তেমন কোন উত্তর দিতে পারেন নি।
স্থানীয়রা বলছেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতে ব্যাপক সংকটে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই প্রধানমন্ত্রী নগদ টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ধরনের অনিয়মের কারণে বঞ্চিত হবেন অনেক অসহায় মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজে অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কুলঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন হতদরিদ্রদের সাথে আলাপ কালে তারা বলেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা তাদের মনগড়া ভাবেই তাদের স্বজন ও সমর্থকদের নাম দিচ্ছেন ফলে প্রকৃত হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপহার থেকে।
এ ব্যাপারে কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান তালুকদার জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে তালিকা তৈরির কারণে অনেক ভুল হয়েছে।
এমন অনিয়ম এবং জনপ্রতিনিধিদের পরিবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সফি উল্লাহ বলেন ইতিমধ্যেই আমরা এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি, এবং উর্ধতন কর্মকর্তাকে অবিহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার সামগ্রীর প্রদানে যাতে কোন ভাবেই অপব্যবহার না হয় সেদিকে কঠোর নজরদারিতে আছে প্রশাসন।