কাঁঠালচাঁপার আর্তনাদে হারিয়ে যাওয়া প্রহর (১৫ তম খণ্ড)
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০২০, ৭:১৭ অপরাহ্ণ
জাকির মোহাম্মদ:
কাজলের জীবন এরকমই অগ্রসর হচ্ছিল। চারদিকে কতশত না পাবার ভীড়ে কেবল এই প্রেমস্বপ্ন একদিন জেগে উঠবে আনন্দের লহরী নিয়ে সেটিই ভাবনায় ছিল। কেবল ভাবনায় ছিল না ফেরদৌসির অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিন্দু বিন্দু জল। একবার হল কি অনেক দিন ফেরদৌসির কোন যোগাযোগ নাই। কি হল? কি হতে পারে এমন সব ভাবনা গুলি খুব কষ্ট দিতে থাকে কাজলকে। বকুল কখনো দেখে, কখনো দেখতে চায় না। আসলে সব দেখাও যায় না। প্রেম করবে কাজল সেইতো বুঝার দরকার আসলে ফেরদৌসির কি হয়েছে?
ঝুম বৃষ্টির দিন শেষ হয়েছে। ক্যাম্পাসে গাছে গাছে সবুজ পাতা কচুপাতা রঙ ধারন করেছে। জারুল আর কৃঞ্চচূড়া যেন থুকা থুকা উঁকি দিচ্ছে আগমনি গান নিয়ে। এই আগমনটি ফেরদৌসির পরিক্ষার। ফার্স্টইয়ারের পরিক্ষা এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে কেউ জানেনা। জাতিয় বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে কিছু বলে কয়ে আসেনা পরিক্ষার হঠাৎ রুটিন তার ফল। তো এজন্যই লাপাত্তা।
কাজলেরও চারদিকের অবস্থা বেশ ভালো না। পারিবারিক নানা সমস্যা আজকাল তারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। শুধুই ভাঙ্গনের সুর। এই সুরের গর্জনে একদিন সাজানো সংসার চুরমার হয়ে যায়। খানখান যেন সবকিছু। কতকিছু বলার থাকলেও নির্বাক কাজল। কিছুই বলতে পারে না। কেমনে বলবে, হাতে টাকা নেই। জবের ভবিষ্যৎ নেই কেমনি কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। বড় ভাইয়ের অনিয়ন্ত্রিত হাত-সংসার খরচের সাথে নানা অভিযোগ উঠে। সব অভিযোগ খন্ডানো যায,কিন্তু তার দায় নেবে কে? কে জীবনের ফুটা হাসনাহেনা খুশবো একত্রে নেবার তুড়জোড় করবে। না। কাজলের বাবা মার সে অবস্থা নেই। নিজেরাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে ঠেকেছেন এখানে কথা বলবেন কী? যেন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকাটাই নিয়তি।
নিয়তির মারমুখো ভাঙনে কেবল কাজল পড়েনি, পড়েছে বকুল। তার ছোট সেজুল হঠাৎ প্রেম করে বসে। দেখা সাক্ষাৎ হয় দুয়েকবার। একবার দাদুর চোখে সেটি পড়ে গেলে জীবনের রঙিন দিন একদিনেই মেঘকালো আকাশ দেখবে সেটি জানেনা কেউ। সেদিন রাতেই দাদু ফিরে যাস ইংল্যান্ড আর সেজুলের দিনে দিন অপ্রাপ্তির আর্তনাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সেজুলের কিছুই ভালো লাগে না। সব সময় দিপাকে নিয়ে ভাবতে থাকতে। এই ভাবনার কালোহাত শুধু বাড়তেই থাকে। দাদুর সাথে কথা হয়,বড় চাচা,মেজ চাচার সাথে ফোনে কথা হয় কোন সুরাহা হয় না। এই করতে করতে সময় বসন্ত ছুঁয়ে যায় আবার। তখনও প্রচণ্ড রোদ আর গরমের মধ্যে ঘরবন্ধি হয়ে সেজুল সারা দিন শুধু গান শুনে। গান শুনার ভলিউম কত উঁচু হয় সে জানে না। যত ভলিউম দেয় ততই যেন তার ভালো লাগে। হোক রাত বারোটা কি দিন বারোটা। তার হিসেব করার কিছুই নেই। সে ঘুম দেয়,ভালো লাগলে খাবার খেতে টেবিলে আসে নতুবা আবার সেই ফুল ভলিউমে গান।
বকুল খুব মনমরা থাকে। কাজলেরও একই অবস্থা। এতকিছু ঘটে যায় জানা অজানার ভেতর ফেরদৌসির। জীবনের অনেক ঘটনা থাকে অনেককে জানানোর কথা থাকলেও জানানো হয় না। তাঁরও নানা কারণ থাকতে পারে। হ্যাঁ,অবশ্যই আছে।
কাজলের আজ খুবই মন খারাপ। ফেরদৌসিকে নক করে সে। তিনবার কল হয়। কিন্তু না ফোন উঠে না। এবার সে একটি উপন্যাস হাতে নেয়। এটি শেষ করতে হবে। অনেক দিন টেবিলে রাখা। বইটি না পড়রে মন খারাপটা যাবে না।
কাজলের মন খারাপ হলেই বই পড়ে। রাত হলে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে যায়। অন্ধকার আকাশই যেন তার মনের কথা বুঝতে পারে। তার সাথে কথা বলতে পারে। তার সাথে কথা বলে। দূর আকাশের তাড়াদের সাথে কতকথা বিনীময় হয় মুহুর্তেই।
রাতের রান্নার সময় হয়েছে। বকুল ডেকে ডেকে ছাদে এসেছে। এখানে মনমরা হয়ে কি করছিস? আয় নিচে?
দাঁড়া না,একটু বস?
বসলে তো রাতের খাবার লেইট হবে?
তোর গল্প শেষ হবে কবে?
তোর কোন গল্প নেই?
হাহাহা।
আছে তো?
এজন্যই তো বললাম,বসলে আর ওঠা হবে না সহজে। চল।
না, আরেকটু বসি।
আজ একসাথে রান্না করবো। সমস্যা নেই।
সেজুলের কি খবর?
সেই আগের মত। কি যে করি। কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কি করা যায়। তুই কি কথা বলবি?
কি বলবো বল?
সেতো ইদানীং কথা বলতে চায় না আমার সাথে?
শুধু বলে, সব এক। তোমরা কেব ল তোমাদেরটা বুঝো?
আমি কি বলতে চাই জানতে চাও না?
কি জানবো?
যা হবার নয়,তা দিয়ে আর হবে কি?
কেন হবে না।
আমি দিপাকে ভালোবাসি।
বড় চাচা সেটি জানেন।
জানেন সেটি বড় চাচি।
এখন তারা সেটিকে মেনে নিতে পারবেন না কেন?
তারা যদি সবকিছু জানেন তবে দাদু রাগ করেন কেন?
দাদুর সাথে নিশ্চয়ই এমন কিছু আলোচনা হয় যা, মানার মত না। এজন্য দাদু সেটি মানেন না।
এখন দিপা কি বলে?
সে তো আমার।
আমান কথায় আছে?
কট করে লাইন থেমে যায়। বকুল কোন কথা বলে না। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ বলে চল কাল ফেরদৌসিকে দেখে আসি?
তার না পরিক্ষা, এখন যাওয়া কী ঠিক হবে?
আমরা যাবো আর আসবো। তার অফিসেই দেখা করবো। কথা বলে দেখ?
এইতো সমস্যা?
তুই কথা বলে নে?
কাল যাচ্ছি….(চলবে)।