সবুজ ঘাসে মুখ লুকাচ্ছে সিলেটের সুরমা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২০, ৮:২৩ অপরাহ্ণ
আহমেদ জামিল:
যে নদী দিয়ে একসময় জাহাজ চলতো। সেই সুরমার বুকে এখন বাচ্চারা খেলাধুলা করে। সবুজ ঘাসে রাখাল গরু চড়ায়। আবার কোথাও ছেলেরা হাত দিয়ে পানি সেচে মাছ ধরে। নদীতে পলি জমে একাধিক জায়গায় জেগেছে বালুর চর। উৎস মুখে পলি জমায় আসছে না পানি।
২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীর বেশিরভাগ অংশই এখন ধু ধু বালুচর। নদীর উৎসমুখ থেকে কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়ার মুখ পর্যন্ত প্রায় ৪২ দশমিক ৫৫ কিলোমিটারই ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষায় বন্যার পানির দেখা মিললেও শীতে দেখা দেয় নাব্য সংকট। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সুরমা।
সিলেটের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের নদী সুরমা। সিলেটের জকিগঞ্জে ভারত থেকে নেমে আসা বরাক মোহনা থেকে সুরমা নদীর উৎপত্তি। ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি সিলেট নগর হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার বাউলাই নদীর মোহনায় মিশেছে। বর্ষায় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানির দেখা মিললেও শীত মৌসুমে দেখা দেয় নাব্য সংকট।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতের বরাক থেকে আসা ৮০ শতাংশ পানি কুশিয়ারা হয়ে যাচ্ছে। আর নালার মতো একটি অংশ হয়ে কিছু পানি সুরমা দিয়ে আসছে। পলি জমায় নদীর উৎস মুখেই জেগেছে বিস্তীর্ণ চর। ফলে শীত মৌসুমে নদীর চরে শীতকালীন সবজি চাষ করেন স্থানীয়রা।
এছাড়া নাব্য কমায় জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরি, আটগ্রাম, বিয়ানীবাজারের চারখাই ও সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে নদীতে বিশাল চর জেগে ওঠেছে। এসব চরে বাচ্চারা খেলাধুলা করছে, রাখাল গরু চড়ান। আবার কিছু কিছু জায়গায় অল্প পানি থাকায় শিশুরা হাত দিয়ে পানি সেচে মাছ ধরছে।
অপরদিকে অপরিকল্পিত আবর্জনা ফেলায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর সিলেট নগরের অংশ। বর্জ্যের স্তুপ আর পলিথিনে জমে ভরে গেছে নদীর তলদেশ।
এ নিয়ে খোদ প্রকৌশলী ও পরিবেশবিদরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া সিলেট নগরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর উপর নির্মিত তিনটি ব্রিজের পিলারে পানির স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে জেগে উঠেছে চর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নদী ভরাট হলেও খননের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিশেষ করে উজানে বরাক মোহনা ভরাট হওয়ায় এই মৌসুমে ৮০ শতাংশ পানি চলে যায় কুশিয়ারায়। যে কারণে নদীর মোহনা খনন জরুরি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে আছে। পলি জমে সুরমা নদীর উৎসমুখ ভরাট হয়ে আছে। জকিগঞ্জের অমলসীদ থেকে কানাইঘাট উপজেলার লোভা নদীর মিলনস্থল পর্যন্ত একাধিক চর জেগেছে। ফলে উৎস নদী বরাক থেকে পানি আসছে না বললেই চলে। সুরমা নদী দিয়ে যে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তা লোভাছড়া দিয়েই আসছে।
তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরেখা দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী নাব্য হারানোর কারণে অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই জরুরি ভিতিত্তে সুরমার উৎসমুখ থেকে চর অংশ খনন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, সুরমার বিভিন্ন পয়েন্টে খনন করা খুবই প্রয়োজন। নদীর উৎস থেকে লোভাছড়ার মুখ পর্যন্ত প্রায় ৪২ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার প্রায় শুকনো। পলি জমে এসব অংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বরাক থেকে আসা পানির ৮০ শতাংশই কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, নদী খনন শুধু পাউবো ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লি্উটিএ) করে। চরের কারণে কোনো জায়গায় নদী ভাঙন হলে আমরা সেখানে কাজ করি। আর বিআইডব্লিউটিএ নদীর নাব্য বৃদ্ধিসহ খননের কাজ করে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে সুরমা নদী খননের কোনো বরাদ্দ আসেনি। নদীর নাব্য বাড়াতে খননের জন্য মেগা প্রকল্প এসেছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলে সুরমা নদী আগের মতো নাব্য ফিরে পাবে।-ডেইলিবাংলাদেশ