সিলেটে করোনায় কর্মহীন মানুষ, বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
জুবেল আহমেদ:
ভয়ঙ্কর করোনা রূপ নিয়েছে মহামারীতে। বিচ্ছিন্ন বিশ্ব। অদৃশ্য দানবের গ্রাসে আতঙ্কিত সবাই। করোনা ভাইরাসের উঁকি-ঝুঁকিতে টেনশনে গোটা সিলেটবাসী। ঘরবন্দি সিলেটের মানুষ।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও অঘোষিত লকডাউন থাকার ফলে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতদরিদ্র ও দিনমজুররা। কর্মহীন হয়ে পড়ায় করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি জীবিকা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমজীবী যেমন-মুটে, মজুর, রিকশাওয়ালা, অটোরিকশা-টেম্পো চালক-হেলপার, সবজি-ফল ও চা-পান বিক্রেতা এবং কুলিসহ নিম্ন আয়ের হাজার হাজার মানুষ চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।
করোনাভাইরাসের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া প্রায় সব বন্ধ। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বেতন পাননি, পাবেন কি-না সে নিশ্চয়তাও নেই। সমাজের এই নিম্নমধ্যবিত্ত চাকরিজীবী লোকেরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। শহুরে জীবনে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠেছেন টানা গৃহবন্দি থেকে, অজানা আতঙ্কে শঙ্কিত থাকছেন, এভাবে কতদিন থাকতে হবে ভেবে। নিম্ন আয়ের মানুষ বা দিন-আনে দিন খায় মানুষের দিন কী করে চলছে তা ভাবতেও আঁতকে উঠছে মন।
সিলেটে এখন পর্যন্ত কয়েক ধাপে অনেক মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এলাকায় জনসমাগম কমাতে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসন। ফলে মানুষের আনাগোনা কমার পাশাপাশি জনজীবনেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন অসহায় দিন মজুররা। করোনায় কর্মহীন থাকলেও, বাড়ছে তাদের ক্ষুধার জ্বালা। কাজ করতে না পেরে অনাহারে থাকছেন তারা। তাদের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে খাদ্য সামগ্রীও সরবরাহ করাও হচ্ছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত না। অনেক এলাকায় মুখ চিনে এসব সহায়তা সামগ্রী বিতরণের অভিযোগও উঠেছে।
সিলেটের দিনমজুর সিরাজ আলী (৪৫) বলেন, ‘একদিন খাম না খরলে না খাইয়া থাখা লাগে, অখন করোনার লাগি বাড়িত বইতাকছি। সারাদিনে একবারও খাইতাম পাইনা। অখন আমরা চলতাম কিলা।
শ্রমিক আবু তালেব বলেন, ‘কাজ নেই, তবে ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। করোনা কি সেটাতো আর ক্ষুধা বুঝে না, ছেলে-মেয়েদের মুখে আহার দিতে হবে। কারও কাছে ধার চেয়েও পাইনি, দেখি কেউ সাহায্য দেয় কি না’।
সিএনজি চালক ইউসুফ মিয়া বলেন, অনেক দিন থেকে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছিনা। আমরা দিন আনি দিন খাই। দেশে এই পরিস্থিতি হলে আমরাতো না খেয়েই মারা যাব।
কর্মহীন অসহায় দিনমজুররা পরিবারের অন্নের জোগান নিয়ে দিশেহারা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছেন। বিচ্ছিন্ন সময়কালে প্রতিদিনের খাদ্য, ওষুধ ও পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী কেনার অর্থের উৎস হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন সমাজের এই দরিদ্র মানুষগুলো।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারিভাবে হতদরিদ্র ও দিনমজুরদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি দিনমজুর মানুষরা না খেয়েই মারা যাবে।