লায়েককান্ড, সিলেটে যা ঘটেছিলো সেদিন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ৫:২৬ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
১ লা এপ্রিল রাত। নগর ভবনে ব্যস্ত সবাই। মেয়র দাড়িয়ে ছিলেন ভবনের সামনে। এমন সময় কাউন্সিলর লায়েক যান সেখানে। লায়েক বলেন- ‘সবাই ত্রান পাচ্ছে, আমার ত্রান কই?’ মেয়র জানালেন- ‘সবাই ত্রান পাচ্ছে যখন তুমিও পাবে। তালিকা সংশোধন করে নিয়ে আসো। ৬ হাজার মানুষ তোমার ওখানে নেই।’ কাউন্সিলর লায়েক নাছোড়বান্দা। তালিকা সংশোধন করবেন না।
মেয়র জানালেন- ‘এতো ত্রান দিতে পারবো না।’ এ নিয়ে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েক। কথাও হচ্ছে উচ্চ স্বরে। লায়েকও অনেকটা জোর গলায় কথা বলছেন। এমন দৃশ্য দেখে মেয়র বললেন- ‘তুমি একটা বেয়াদব। কীভাবে কথা বলতে হয় জানো না।’ ক্ষেপে গেলেন লায়েক। পরিস্থিতি দস্তাদস্তির পর্যায়ে। উপস্থিত কাউন্সিলর ও সিটি কর্মকর্তারা দু’জনকে সরিয়ে নিলেন দু’দিকে। আবুল কালাম আজাদ লায়েক। সিলেট নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর। লায়েকের দাবি- ৬ হাজার ২০০ প্যাকেট খাদ্য দ্রব্য। মেয়র দিতে চান ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট। এ কারনে ওই ওয়ার্ডে ত্রান বিতরনে বিলম্ব হচ্ছিলো।
১লা এপ্রিল রাতে ত্রানের জন্য লায়েক মেয়রের কাছে গেলে এমন ঘটনা ঘটে। ওই দিন ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা কয়েকজন কাউন্সিলর ও সিটি কর্মকর্তা জানান- সিটি করপোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলরের মধ্যে এধরনের ঘটনা দু:খজনক। এ ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা মেয়রকে না জানিয়ে কাউন্সিলর লায়েককে ১২৫ বস্তা চাল দেন। লায়েকের ওয়ার্ড কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওই চাল। জানিয়ে দেওয়া হয়- তেল, ডাল সহ সব উপকরণ দেওয়া হবে। কাউন্সিলর যেনো নিজে প্যাকেট করে ২৫০০ হতদরিদ্র মানুষের কাছে বিতরন করে দেন। কিন্তু মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সেটি জানার পর ক্ষেপে যান। কাউন্সিলর লায়েক ১২৫ বস্তা চাল জোরপূর্বক নিয়ে গেছেন বলে দাবি তুলে মেয়র আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। মেয়রের এমন অভিযোগ যারাই শুনেছেন, লায়েকের উপর ক্ষেপেছেন।
কিন্তু লায়েক জানান- ‘ওই চাল তিনি নিয়ে যাননি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা রিসিট মারফত তার কাছে পাঠিয়েছেন। তার লোক মাল রিসিভ করে রেখেছে।’ মিথ্যা অপবাদ তোলায় ক্ষেপে যান লায়েক। চাল ফেরত দেবেন না বলে জানান। পরে আওয়ামী লীগ নেতা এবং কয়েকজন কাউন্সিলরদের মধ্যস্থতায় শুক্রবার লায়েক চাল ফেরত দেন। এ সময় তিনিও রিসিটের মাধ্যমে চাল ফেরত পাঠান। চাল ফেরত পাওয়ার পর সিটি করপোরেশন থেকে লায়েককে ২৫০০ হাজার প্যাকেট খাদ্য দ্রব্য দেওয়া হয়।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান- ‘কাউন্সিলর লায়েক অসহায় পরিবারের যে তালিকা দিয়েছিলেন তা অবাস্তব ছিল। একটি ওয়ার্ডে ৬ হাজার অসহায় দু:স্থ পরিবার এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাকে আড়াই হাজার প্যাকেট ত্রাণ দেওয়ার কথা বলায় তিনি জোর করে ১২৫ বস্তা চাল নিয়ে যান। পরে চাল ফেরত দিয়ে ওই আড়াই হাজার প্যাকেট নিয়ে গেছেন।’ এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েক জানিয়েছেন- ১ লা এপ্রিল সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা ১২৫ বস্তা চাল ট্রাক সহ তার ওয়ার্ড অফিসে পাঠিয়েছিলেন। সেটির রশিদ তার কাছে রয়েছে।
কথা ছিলো পরবর্তীতে তার ওয়ার্ডের ২৫০০ মানুষের খাদ্য দেওয়া জন্য সিটি করপোরেশন তেল, ডাকল সহ অন্যান্য মালামাল পাঠাবে। পরে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যে, সিটি করপোরেশন প্যাকেজিং করে ত্রানের প্যাকেট পাঠাবে। এ কারনে ওই চাল ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন- সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে এভাবে অনেক কাউন্সিলর চাল সহ ত্রানের মালামাল নিয়ে গেছেন। সেগুলো তারা নিজেরাই প্যাকেট করে বিতরন করেছেন।
সুতরাং এখানে চাল চুরির যে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে সেটি ভুয়া। চাল গ্রহন ও ফিরিয়ে দেওয়ার দুটি রশিদই তার কাছে রক্ষিত আছে বলে জানান। ত্রান বিতরনের দায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশল রুহুল আলম জানিয়েছেন- ‘কাউন্সিলর লায়েক জোরপূর্বক চাল নিয়ে যাননি। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। পরে চাল ফেরত দিয়ে তিনি খাদ্য দ্রব্য নিয়ে গেছেন।’