করোনা ঝুঁকিতে চা শ্রমিক!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২০, ৫:০৮ অপরাহ্ণ
তোফায়েল পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে:
বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিবন্ধিত ১৬৭টি চা বাগানে কাজ করেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক। করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ পোশাক কারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও কাজে যেতে হচ্ছে চা শ্রমিকদের। এক সঙ্গে অনেক মানুষের সমাগম হয়ে কাজ করার কারণে বাড়ছে করোনা ঝুঁকিও। কেউ স্বেচ্ছায় ছুটিতে যেতে চাইলেও রয়েছে বেতন কাটার হুঁশিয়ারী। এ অবস্থায় সাধারণ ছুটির দাবি জানিয়েছেন চা শ্রমিকরা।
সারা বিশ্বের মতো করোনা আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশও। এরইমধ্যে করোনা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি। কিন্তু ছুটি নেই দেশের দেশের অন্যান্য চা বাগানের শ্রমিকের মতো এখনো ছুটি পাননি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ সব এলাকার চা শ্রমিকরা। করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলোয় ঘাম ঝড়াচ্ছেন এখানকার চা শ্রমিক। এতে তারা রয়েছে করোনা ঝুঁকিতে। স্বেচ্ছায় গৃহবাসে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বেতন কাটার ভয়ে অনেকেরই।
জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার চা বাগানের শ্রমিকরা জানায় উপজেলার অধিকাংশ চা বাগানে করোনাভাইরাসের বিষয়ে তেমন সচেতনতা নেই। তবে শ্রমিকদের ছুটি দেয়নি বাগান কর্তৃপক্ষ। চা শ্রমিকদের দাবী অবিলম্বে সব চা বাগানে মজুরিসহ ছুটি দেওয়া হোক।
মজুরিসহ সাধারন ছুটির দাবিতে সোমবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া, রাজঘাট, কালিঘাট চা বাগান সহ সব চা বাগানেই শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছে। তাদের দাবি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে লক ডাউন ঘোষনা করে সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রেখে ছুটি দিয়ে নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে থাকার জন্য বলা হলেও চা শ্রমিকদের কাজ বন্ধ দেয়া হয়নি এবং তাদের ছুটিও দেয়া হয়নি। তাদের দাবি চা শ্রমিকদের ছুটি দেয়া হোক।
কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতোই সকাল থেকে চা-শ্রমিকরা এসে কাজে যোগদান করেছে। রুটিন অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। তারা জানান, তাদের ছুটি নেই। তাই কাজে এসেছেন। আর কাজ না করলে খাবার জুটবে কই থেকে। মালিক ও বড় বাবুরা ঘরে বসিয়ে টাকা দেবে না। করোনা ভাইরাস নিয়ে তারা বলেন, এটার কথা শুনেছি। তবে উপরওয়ালা আমাদের রক্ষা করবেন।
উপজেলার একাধিক সামাজিক ও সচেতন ব্যক্তিরা জানান, খুব দ্রুত সম্ভব চা শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে ঘরে থাকা ও করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে। অন্যথায় যদি কোনো একজন শ্রমিক আক্রান্ত হয়ে যান। তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, একজন শ্রমিক আক্রান্ত হলে তা ছড়িয়ে পড়বে হাজারো শ্রমিকের মাঝে। এজন্য মজুরিসহ সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ সরকারি বরাদ্দের দাবি তাদের।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কইরি বলেন, চা শ্রমিকরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করেন। নিত্যপ্রয়োজনে হাটবাজার ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চলাচল করেন তারা। এছাড়াও চা শ্রমিকদের অনেকেই বাগানের কাজ ছাড়াও স্থানীয় বাসা-বাড়িতেও কাজ করে। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো চা শ্রমিকদের ছুটি দেয়া প্রয়োজন।