সিলেটে মাত্র ৭শ’ টাকার জন্য খুন হন শাহিন!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২০, ৮:১১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে মাত্র ৭শ টাকা ও একটি মোবাইল ফোনের জন্য নগরীতে দিনেদুপুরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন এক যুবক। শনিবার দুপুর আড়াইটায় নগরীর শিবগঞ্জ রায়নগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই যুবকের নাম শাহীন মিয়া (২৫)।
তিনি কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে তিনি সপরিবারে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ রায়নগর এলাকার বাবুল মিয়ার বাসায় (বসুন্ধরা-৫) ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন থেকে রায়নগর এলাকায় চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছিল। তাদের টার্গেট ছিলো রায়নগর এলাকায় বসবাসরত গরীব ও দিনমজুর লোকজন। চাঁদার টাকা না দিলে সন্ত্রাসীরা তাদের বেধড়ক মারধর করতো। চাঁদাবাজির টাকা উত্তোলন করে রায়নগর এলাকায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলো সন্ত্রাসীরা।
শুক্রবার সকাল ১১টায় শাহীনের বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। এসময় শাহীন বাসায় ছিলেন না। বাধ্য হয়ে শাহীনের মা তার জমানো ৩শ টাকা তুলে দেন চাঁদাবাজদের হাতে। এসময় শাহীনের পরিবারকে শাসিয়ে যায় তারা। শনিবার দুপুর আড়াইটায় আবারো শাহীনের বাসায় আসে ৬-৭ জন সন্ত্রাসী।
এসময় তারা শাহীনকে বাসার বাইরে বের করে আবারও চাঁদা দাবী করে। শাহীন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জোর করে তার পকেটে থাকা নগদ ৭শ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। এসময় শাহীন প্রতিবাদ জানালে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে শাহীনকে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। এতে গুরুতর আহত হন শাহীন। শাহীনের চিৎকার শুনে তার পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ঘটনাস্থলেই শাহীনের মৃত্যু হয়।
শাহীনের ছোটভাই লাহিন এলাকাবাসীর সহায়তায় শাহীনকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে শাহীনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। সরেজমিনে নিহত শাহীনের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। তার স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো রায়নগর এলাকা। পুত্রশোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শাহীনের মা।
এদিকে, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, কোতেয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মিঞা, ওসি (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র। এ সময় রায়নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মছন মিয়া নামে এ যুবককে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি ছলছে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. সেলিম মিঞা জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাই এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করি। বর্তমানে নিহতের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।