হবিগঞ্জে সূর্যমুখী চাষ : এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়ায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মার্চ ২০২০, ১০:০৫ অপরাহ্ণ
ছনি চৌধুরী:
নজরকাড়া সৌন্দর্য, সেইসাথে তেল হিসেবেও ব্যবহার রয়েছে। বলছি সূর্যমুখীর কথা। হবিগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলায় প্রথমবারের মতো ৫২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন শতাধিক কৃষক। আর এইসব মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহে চোখ জুড়াতে আসছেন শতশত দর্শনার্থীরা। কৃষি অধিদপ্তর বলছে, কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় বেশ খুশি কৃষকও। দিন দিন এ অঞ্চলে সূর্যমূখী ফুল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ বছর ৫২০ বিঘা জমি থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার তেল বিক্রি করা হবে বলে মনে করছেন হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮টি উপজেলায় প্রথমবারের মতো ৫২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন শতাধিক কৃষক। আর এইসব মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহে চোখ জুড়াতে আসছেন শত শত দর্শনার্থীরা। প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের বাগান চাষ করে ভেজায় খুশি কৃষক ও কৃষি অধিদপ্তর। এ বছর ৫২০ বিঘা জমি থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার তেল বিক্রি করার হবে বলে মনে করছেন হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের মান্দারকান্দি গ্রামের পার্থ সারথি ঘোষ বাড়ীর পাশের ৬২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। পার্থ সারথি ঘোষের সফলতা দেখে অন্যান্য চাষীরাও এবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে চাষী পার্থ সারথি ঘোষ বলেন- সূর্যমূখী ফুলের চাষে বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। কর্তন করতে কিছু টাকা খরছ হবে। পুরো ফসলে সামান্য রাসায়নিক সার আর দুইবার সেচ দিতে হয়। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগীতায় ফসলে সফলতা পেয়েছি। আগামীতে আরো ১০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা আছে।
এদিকে প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসছে। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন এবং সৌন্দর্যে ভরপুর সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখে আনন্দিত দর্শনার্থীরা। তারা বলেন- চারিদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছে সে এক অপরূপ দৃশ্য। সূর্যমুখীর নজরকাড়া সৌন্দর্য পুলকিত করে যে কাউকেই।
ওই অঞ্চলের বল্কে দায়ীত্বরত নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী অলক কুমার চন্দ্র বলেন- আগে ওই জমিতে বছরে একবার ধানের ফসল হতো। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য এবারই প্রথম সূর্যমুখী ফুলের চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল বেশি পুষ্টিগুন সম্পন্ন। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এ ফুলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় নবীগঞ্জের কৃষকরা সূর্যমুখীর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। যেখানে বছরে ১ বার ধান ফসল হতো সেখানে এবার সূর্যমূখী ফুলের বীজ বপন করার পর ১শ থেকে ১শ ১০ দিনে ফুল তোলা যায় বলেও জানান অলক কুমার চন্দ্র।
সূর্যুমখী ফুলের বাগান পরদির্শনে এসে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম বলেন- এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষীদের রাজস্ব প্রকল্প থেকে ও প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় ফসল করতে বীজসহ সার্বিক সহযোগীতা করা হয়েছে। এটা আমাদের কৃষি বান্ধব সরকারের একটা বিশেষ অর্জন এবং মুজিব বর্ষে সফল ফসল হয়েছে। এই সূর্যমুখী ফুলের বাগানে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভীড় করছেন, তারা ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করছেন। এ ছাড়া কৃষি অফিসের উপ-সহকারী অলক কুমার চন্দ্র এখানে সার্বক্ষণিক থেকে সহযোগীতা করে চাষীদের পরার্মশ দিচ্ছেন। এখন অনেকেই যোগাযোগ করছেন বীজ নেয়ার জন্য। আগামীতে সরিষা ও সূর্যমুখীর চাষ বাড়বে বলেও আশাবাদী তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রান্তিক কৃষকদের আরো সার্বিক সহযোগীতা ও সূর্যমূখী চাষে আগ্রহী করে তুললে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান বলেন- হবিগঞ্জ জেলায় ৫২০ বিঘা জমিতে শতাধিক কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এ বছর আড়াই কোটি টাকার তেল বিক্রি করা হবে। এখন এই প্রকৃতির অপরূপ সুন্দর্য দেখে ফুলে ফুলে সজ্জিত এই হবিগঞ্জের মাঠ। এই ফুলের সুন্দর্য উপভোগ করছেন প্রতি শ্রেণী পেশার লোকজন। সূর্যমুখী ফুলের এই সফল ফসলের ফলে বাংলার কৃষিতে নতুন মাত্রা সংযোজন হয়েছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানী করা হয়। দেশের চাষকৃত সূর্যমূখীর মাধ্যমে তেলে ঘাটতি পূরন করা সম্ভব।