বিশ্বনাথের শুঁটকি যাচ্ছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৫:১৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের বিশ্বনাথের শুঁটকির পরিচিতি এখন বিশ্বময়। এখানে উৎপাদিত শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এখানে শুঁটকি উৎপাদনের বদৌলতে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক নারী-পুরুষের। এছাড়া শুঁটকিতে উচ্চমাত্রার আমিষ বা প্রোটিন, ভিটামিন ‘ডি’ ও কোলেস্টেরল রয়েছে।
বাঙালীর রসনা বিলাসে শুঁটকি মাছের জুড়ি নেই। আর তা যদি হয় দেশী জাতের ছোট মাছের শুঁটকি তাহলে তো কথাই নেই। সাধারণত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুঁটকি মাছের ব্যবসা করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।
তেমনি বেশ কয়েক বছর ধরে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মাহতাবপুর গ্রামের শুঁটকি মাছ এখন ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চেলে। তবে এর বেশি প্রধান্য ইউরোপের দেশগুলোতে।
শুটকি মাছ সংরক্ষণ এবং রান্না সুবিধা থাকায় তাজা মাছের তুলনায় বর্তমানে শুঁটকির বিক্রি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এছাড়া শুঁটকিতে উচ্চমাত্রার আমিষ বা প্রোটিন, ভিটামিন ‘ডি’ ও কোলেস্টেরল রয়েছে। শুঁটকি কম-বেশি সবারই প্রিয়। বিশেষ করে সিলেট এলাকার প্রবাসীরে কাছে শুঁটকি অত্যন্ত প্রিয় খাবার। ফলে দিন দিন সিলেটে বাড়ছে শুটকির কদর।
অগ্রহায়ন থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত এই চার মাস শুটকি তৈরীর ভরা মৌসুম। এই সময়ে বাজারে মাছের মূল্য কম থাকায় বেশি পরিমাণে শুঁটকি তৈরি সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্বনা উপজেলায় বানানো এই শুঁটকি দেশের বাজারেই নয় চলে যাচ্ছে ব্রিটেন, আমেরিকা ও সৌদি আরব, ভরতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে। এতে মাহতাবপুরের শুঁটকির বাজারও একটি শিল্প হয়ে উঠেছে। এ ব্যবসা নিয়ে অনেক সম্ভাবনা আছে বলে দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের বিশ্বনাথ ও জালালাবাদ এলাকার মধ্যবর্তী মাহতাবপুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে শুঁটকির প্রায় ৪০টি ডাঙ্গি রয়েছে। এখানে খাঁচার ওপর মাছ শুকিয়ে এখন শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। আর শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ২ থেকে ৩শ নারী-পুরুষ। মাহতাবপুরের প্রায় তিন শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক শুঁটকির জন্য মাছ কাটা এবং ধোয়ার কাজ করেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজের বিনময়ে তারা মজুরি পান ১৩০-১৫০ টাকা। এসব কাটা মাছে লবন ছিটিয়ে ৩/৪ ঘন্টা রেখে রোদে শুকানোর জন্য প্রথমে চাঁচ বিছিয়ে মাটিতে এবং কিছু শুকানোর পর মাঁচায় দেওয়া হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ দিন শুকানোর পর টিল মেরে প্রক্রিয়াজাত করে শুঁটকি তৈরি করা হয়।
প্রায় পাচঁ থেকে ছয়দিন শুকানোর পর, টিল মেরে প্রক্রিয়াজাত করে শুটকি তৈরি করা হয়। এখানে পুঁটি, টেংরা, বাইম, চিংড়ি, চাঁন্দা ও কাইখ্যা এইসব প্রজাতির মাছের শুটকি করা হয়। তাদের এ শুটকি গুলো ব্রাম্মণবাড়িয়া বা ঢাকার কিছু লোক পাইকারি ধরে ক্রয় করে নেন, এরা আবার এগুলো ভারতে বিক্রি করেন, তাদের বিক্রিত শুটকিগুলো সব জায়গায় বেশ জনপ্রিয়, তাই তারা এ মৌসুমে ুই থেকে তিন কোটি টাকার শুটকি পাইকারী দরে বিক্রি করে থাকেন বলে জানান উৎপানকারীরা।
মাহতাবপুরের একটি বড় শুটকির আড়তের মালিক মান্নান জানান, তারা প্রতি বছরে ৬ মাস শুটকি বিক্রি করতে পারেন। তাদের শুটকি গুলো পাইকারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, তাই তারা এগুলো বিক্রি করে আনন্দিত। শুটকির আড়তের নারী শ্রমিক জুলেখা বেগম বলেন, সারাদিন কাজ করে মাত্র ১৫০ টাকা মজুরিতে আমাদের সংসার চলে না। আমার গরিব মানুষ নদীতে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে, বাচ্চাদেরকে লেখাপড়া করানোর জন্য কোন কাজ না পেয়ে, অভাবের সংসারে অল্প টাকায় এ কাজ করি। তাতে আমাদের সংসার চলে না। এ ব্যবসার ভবিষ্যৎ আছে’ াবী করে ডাঙ্গারীর মালিক মাহতাবপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন, ধলিপাড়া গ্রামের আলতাব মিয়া ও ঘিলী রামপুরের কালা মিয়া বলেন, এই মৌসুমে তারা শুটকির উৎপাদন করে থাকেন। এটা অল্পদিনের লাভজনক ব্যবসা। সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত ছড়ারপাড়ে (মাছিমপুর)এসব শুটকি বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সারাদেশে ও বিদেশে পৌঁছে যায়।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, বিশ্বনাথের মাহতাবপুরে গত ২০১৮/১৯ বছরের তথ্যমতে ২শত ৯৭ মেট্রিকটন সবজাতের শুটকি তৈরি হয়। দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হয়।
বিশ্বনাথ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, আমাদের কাছে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কোন তালিকা নেই তবে, উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সব সময় তদারকি রয়েছে।