স্বপ্নের ইউরোপ যাত্রায় লাশ হওয়া ফয়ছল’র নিথরদেহ উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৪:৪২ অপরাহ্ণ
তাইজুল ফয়েজ, গ্রিস থেকে :
স্বপ্নের ইউরোপ যাওয়া হয়নি বালাগঞ্জের যুবক এনামুল জায়গীরদার ফয়ছলের। ইউরোপ যাওয়ার পথে রাস্তায় তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। লাশ যাওয়া যাচ্ছিল না কোথাও। অবশেষে গ্রীস প্রশাসন সর্বাত্মক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলেকজান্ডার পলি বর্ডার এরিয়া থেকে হেলিকপ্টারযোগে এনামুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে ।
ইউরো বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাইজুল ইসলাম ফয়েজকে বাংলাদেশ দূতাবাস এর কাউন্সিলর ড. সৈয়দা ফারহানা নূর চৌধুরী জানিয়েছেন এনামুলের বিষয়টি গ্রিস প্রশাসনকে অবগত করার পর থেকে লাশ পাওয়ার সন্ধান করে যাচ্ছিল। দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রবাসবন্ধু মো.জসিম উদ্দিন এনডিসি গ্রীস প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে রীতিমত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন । তারই ধারাবাহিকতায় গ্রীস প্রশাসন সর্বাত্মক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলেকজান্ডার পলি বর্ডার এরিয়া থেকে হেলিকপ্টারযোগে এনামুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে আলেকজান্ডার পলি নামক হসপিটালে হস্তান্তর করেছে ।
উল্লেখ্য গত কয়েক দিন থেকে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর নিবাসী আহমদ জায়গীরদারের দ্বিতীয় ছেলে এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়ছল (বোয়ালজুড় বাজারের সাবেক ব্যবসায়ী)তুরস্ক থেকে গ্রিস যাওয়ার পথে ইন্তেকাল করেছেন শিরোনামে সুরমানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ফয়সালের সাথে থাকা নিকট আত্মীয় ফয়েজ বলেন তারা তুরস্ক বর্ডার অতিক্রম করে গ্রীস বর্ডারে প্রবেশ করলে বরফের মধ্যে ফয়ছল অজ্ঞান হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তাহার জ্ঞান ফিরে আসে এবং খাবার চায় তার পরে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।তারা দালালের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এনামুলের মৃতদেহের বেশ কয়েকটি ছবি তুলেন। দালাল তাদেরকে হুমকি-ধামকি দিয়ে লাশটি ফেলে দিয়ে তাদেরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে আসে। এনামুলের সঙ্গে থাকা ফয়েজ নামের ব্যক্তি এথেন্স এসে পৌঁছেছেন।
দূতাবাসের কাউন্সিলর ডক্টর সৈয়দা ফারহানা নুর চৌধুরী বলেন এনামুলের মত অবৈধ পথে আর যেন কোন বাংলাদেশী ইউরোপে পারি না জমায়। বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের শ্রমবাজার চালু করার। আমরা আশাবাদী খুব শীঘ্রই ইউরোপের শ্রমবাজার চালু হবে। দালালদের খপ্পরে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর কোনো যুবক প্রাণ হারায় সরকার তাহা চায় না।
দূতাবাসের প্রথম সচিব ও কাউন্সিলর লেখক সুজন দেবনাথ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমিনের নির্দেশে, মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রবাসবন্ধু মো.জসীম উদ্দিন এনডিসির দিকনির্দেশনায় গ্রিস প্রশাসন ও দূতাবাস এর সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এনামুলের লাশ পেতে আমরা সক্ষম হয়েছি।দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাংবাদিকবৃন্দ তাদের লেখনীর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
গ্রীস জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো.মুমিন খান বলেন ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও লন্ডনে অবস্থানরত আওয়ামী, লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও কমিউনিটি ব্যক্তিবর্গ যে ভূমিকা রেখেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বিএসসি বলেন এনামুলের লাশ পেতে বাংলাদেশ দূতাবাস, পুলিশ-প্রশাসন এর পাশাপাশি সাংবাদিকবৃন্দ যে ভূমিকা রেখেছেন। গ্রিসের ইতিহাসে এক নজির স্থাপন করল। আমাদের আরো সচেতন হতে হবে আমরা যেন আর অবৈধ পথে ইউরোপ এর দিকে পাড়ি না জমাই। এনামুলের লাশ বাংলাদেশি যুবকদের সতর্কবার্তা দিয়ে গেল। আমরা তাহার বিদায়ী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।