এবার মক্কায় দেখা যাবে সিলেটি নরসুন্দর!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ২:৪৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সারাদেশের মতো সিলেটের ছয় ধরণের জনগোষ্ঠীর ওপরও ১ মার্চ থেকে জরিপ শুরু হচ্ছে। এরা কামার, কুমোর, নরসুন্দর, বাঁশ ও বেত প্রস্তুতকারক, কাঁশা/পিতল প্রস্তুতকারী এবং জুতা মেরামত/প্রস্তুতকারী। বৃহত্তর সিলেটে সুনামগঞ্জ ব্যতিক্রম। কারণ বর্তমানে চলমান ২০ জেলা পাইলট স্কিমে এই জেলার ১৬০৯ জন প্রান্তিক মানুষ প্রত্যেকে ১৮ হাজার করে টাকা পেয়েছেন। খবর সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ড্রিম প্রজেক্টের অন্যতম এটি। কর্মকর্তারা বলেন, তার দর্শন হলো, এসব পেশা ও পেশার মানুষকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে হবে। নিজ পেশায় থেকেই তারা হবেন উদ্যোক্তা। এখন নাপিত বা নরসুন্দর রপ্তানির কথা ভাবা হচ্ছে। হজের আগে মক্কার চাই দক্ষ নরসুন্দর। বর্তমান এর বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। টিকে গেলে ভবিষ্যতে সরকারি খরচে মক্কার পথে পথে হয়তো সিলেটি নরসুন্দরের দর্শন মিলবে।
উল্লেখ্য, এই ছয় সম্প্রদায়ের কত মানুষ সিলেটি, সেটা ইতিহাসে এই প্রথম জানা যাবে। একটি সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক জুলাই ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। এটি এখন ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূল প্রকল্পটি মোট আটটি জেলায় বাস্তবায়নের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পরে সেটা ২০টি জেলায় বাড়িয়ে ব্যয় ৬৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। এই প্রকল্পের সাধারণ উদ্দেশ্য হল, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন। বিশেষ করে যারা আদি ক্ষুদ্র ব্যবসা/পেশায় নিয়োজিত। যেমন কামার, কুমোর, নাপিত, বাঁশ ও বেত প্রস্তুতকারক, কাঁসা-পিতল প্রস্তুতকারী এবং জুতা মেরামত ও প্রস্তুতকারী। এ কার্যক্রম প্রান্তিক জনগোষ্ঠী স¤প্রদায়ের বহুমুখী উন্নয়নের জন্য স¤প্রসারিত হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, নয়টি উদ্দেশ্য অর্জন করতে চাই আমরা। ১. বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরা, ২. প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যারা আদি ক্ষুদ্র পেশায় নিয়োজিত তাদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ, ৩. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপার্জনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, ৪. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, ৫. তাদের আদি পেশার টেকসই উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা জন্য মুলধন প্রদান, ৬. তাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান, ৭. স্থানীয় জনপ্রশাসনকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা, ৮. পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র পেশাজীবী সম্প্রদায়কে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা।
কর্মকর্তারা বলেন, প্রত্যেক প্রান্তিক জন সদস্য একটিবারের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ১৮ হাজার করে টাকা পাবে। গত সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জ পরিদর্শনকারী একজন কর্মকর্তা বলেন, কিছু সদস্য নিয়ে তারা বিপাকে আছেন। কারণ তারা নিয়মিত মদ পান বা নেশাদ্রব্য গ্রহণে অভ্যস্ত। তারা টাকা পেলেও উদ্যাক্তো বা প্রশিক্ষণ নিতে অনাগ্রহী।
আরডিপিপি ২০১৯ অনুযায়ী, চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম হলো দেশের ২০ জেলার ১০১ টি উপজেলার আদি পেশায় নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জরিপ করা ৬৯ হাজার ৬৮২ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৩ হাজার ৩৪৩ জনকে স্বপেশায় দক্ষ ব্যক্তিদের পেশায় মানোন্নয়নে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তিন দিনব্যাপী স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং ১৮ হতে ৩ বছরের কর্মক্ষম অদক্ষদের স্বপেশার তালিকাভুক্ত ওস্তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী হাতে-কলমে তিন থেকে ছয় মাসব্যাপী অ্যাপ্রেন্টিসশিপ এস্তাদ–সাগরেদ প্যাটার্ণে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে এবং সমানসংখ্যক এককালীন অনুদান প্রদানের মাধ্যমে তাদের পরিবারের প্রায় ১ লাখ সদস্যকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা।
সুনামগঞ্জ : সিলেটের সুনামগঞ্জের মোট প্রান্তিক সদস্য ৬ হাজার ৫৩ জন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাতকের। ১৫৭৬ জন।এছাড়া তাহিরপুরে ৪৩৫, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৫০৫, জামালগঞ্জে ২৮০, ধর্মপাশায় ২১৪, দিরাইয়ে ২৩৪, দোয়ারাবাজারে ৬৩৮, জগন্নাথপুরে ৯৭০, বিশ্বম্ভরপুরে ৫৩০, শাল্লায় ৩২ এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৬৩৯ জন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন।