হবিগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী পলো বাইচ প্রতিযোগিতা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ৯:৩৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
হবিগঞ্জে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পলো বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্যকে আবারও জাগ্রত করে তুলেছে বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া গ্রামবাসী। আজ সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় বরান বিলে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে এতে অংশ নিয়ে প্রতিযোগিতাকে মাতিয়ে তুলেছে কয়েক শ মানুষ।
জেলার বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া গ্রামের বরান বিলে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে পলো বাইচ প্রতিযোগিতা। এক সময় জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলায় এ প্রতিযোগিতার প্রচলন ছিল। বিভিন্ন নদী, বিলে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো।
শুধুই মাছ ধরা নয়, এর মাঝে ছিল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের মিশ্রণ। ছিল মানুষের বিনোদনেরও অন্যতম মাধ্যম এটি। বর্তমানে এটি হারিয়ে গেলেও আতুকুড়া গ্রামবাসী এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। পলো বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক শ মানুষ। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দুইজনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয় মোবাইল ফোন আর দ্বিতীয় পুরস্কার পিতলের ট্রপি। প্রতিযোগিতাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
সোমবার সকাল থেকেই আতুকুড়াসহ আশপাশের গ্রাম ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন মাছ ধরতে পলো নিয়ে বিলে হাজির হন। সাথে ছিল ভেড় জাল ও ছিটকি জালের সমারোহ। প্রতি বছর শীত মওসুমে হাওরের পানি কমতে শুরু করলে বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া, সুবিদপুর, কাটখাল, মিঠাপুর, দরওয়া, মেওতুল, নাগুরা, সুনারুসহ আশপাশের গ্রামের মুরুব্বীরা বসে পলো দিয়ে মাছ শিকারের তারিখ নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে কয়েক হাজার লোক পলো, জাল, দড়িসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে বিলে হাজির হন। মাছ শিকার উৎসব উপলক্ষে আশপাশের গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবমূখর পরিবেশ।
সোমবার শিকারীদের অনেকেই বোয়াল, গজার, শোলসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরেন। প্রায় দুই হাজার শিকারী কয়েক লাখ টাকার মাছ শিকার করেন। মাছ ধরা পড়ার সাথে সাথে তাদের আনন্দে শরীক হন পাশের লোকজন। পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক ঝাপ দেওয়া আর হৈ হুল্লোর করে সামনের দিকে ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় এক দৃশ্য। মাছ শিকার উৎসবে পলো ছাড়াও ফার জাল, ছিটকি জাল, ঝাকি জাল, পেলুন ইত্যাদি দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকে।
আতুকুড়া গ্রামের সালাউদ্দিন পলো দিয়ে একটি গজার এবং ১টি আইড় মাছ ধরেন। তিনি এই মাছ শিকার করতে পেরে আনন্দিত। একই গ্রামের শিপন পান দুটি আইড় এবং একটি গজার। দেশীয় এই মাছ শিকার করতে পেরে তিনি খুশি। শিপন জানায় প্রতি বছরই তিনি পলো দিয়ে মাছ শিকার করতে যান।
বানিয়াচং উপজেলার পাথাড়িয়া গ্রামের কামাল মিয়া ৫ কেজি ওজনের গজার মাছ শিকার করে পান প্রথম পুরস্কার মোবাইল ফোন। তিনি এই পেুরস্কার পেয়ে আনন্দিত।
আতুকুড়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক এসএম সুরুজ আলী জানান, পলো বাইচ প্রতিযোগিতা দেওয়ার আগে বিলে জাল ফেলে মাছ ধরে নেয় ইজারাদাররা। ফলে প্রতিযোগিরা তেমন মাছ পান না। এ ছাড়া প্রতিযোগিতা শেষে বিলে বিষ দিয়ে মাছ নিধন করা হয়। এতে মাছের বংশবিস্তার বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই বিলে যেন বিষ দিয়ে মাছ নিধন না করা হয় সেদিকে সরকারকে সুনজর দিতে হবে। মাছের যেন বংশ বিস্তার রোধ না হয়।