কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর : আজও বিচার পায়নি পরিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পূর্ণ হলো আজ (২৭ জানুয়ারি)। দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু সাক্ষী না আসা, আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির না হতে পারাসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিচারকাজ এখন দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে।
অপরদিকে একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলাটির চার্জশিট প্রায় এক বছর আগে দেয়া হলেও এখনও চার্জ গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায়ও অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করেন নিহতদের পরিবার ও আহতরা। তবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়ার। এখনও এ ঘটনার তদন্ত নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট পাঁচজন নিহত হন। এতে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪৩ জন।
ওই ঘটনায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে প্রায় ৪ বছর আগে। এখনও পর্যন্ত ১৭১ জন সাক্ষীর মাঝে মাত্র ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলার চার্জশিট প্রায় এক বছর আগে দেয়া হলেও নানা জটিলতায় এখনও আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে হামলায় আহত হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির বলেন, উদীচীর সভায় বোমা হামলার ঘটনায় ১৯ বছর পর বিচার হয়েছে। এখানে ১৫ বছর না ১৯ বছর সেটি কোনো বিষয় নয়। অপরাধ যারা করে তারা কোনো দিন রেহাই পায় না। কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারও অবিলম্বে মানুষ দেখতে পাবে ইনশাআল্লাহ।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া মামলার চার্জশিট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ঠিকমতো তদন্ত হয়নি। চার্জশিটও সঠিক নয়। যারা লাইট বন্ধ করেছে, যে গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছে তাদের নাম আমরা জানি। কিন্তু তাদের পেছনে কে? কারা আসল মদদদাতা এবং গ্রেনেডের উৎস কী সেটি তারা জানাতে চায়নি।
মামলা দুটির বাদী হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান চার্জশিট সম্পর্কে ড. রেজা কিবরিয়ার মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন পরে এটি সম্পর্কে কেন মন্তব্য করতে গেলেন তা আমি জানি না। চার্জশিট মনপুত না হওয়ায় আমরা তিনবার নারাজি দিয়েছি। পরবর্তীতে যখন চার্জশিট এলো তখন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বিচারকাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পর তিনি এ নিয়ে কেন মন্তব্য করলেন আমি জানি না। হতে পারে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পরিবর্তনের কারণে। তিনি সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এটির কারণেও হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি কিবরিয়া হত্যার বিচার বাংলার মাটিতে একদিন হবেই।
মামলার আইনজীবী সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, হত্যা মামলার মোট সাক্ষী রয়েছেন ১৭১ জন। এর মাঝে মাত্র ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। কারণ প্রথমত সাক্ষিরা সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তাদের ঠিকমতো আনা সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত এ মামলার আসামিরাও সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের দেখা যায় একই দিন একাধিক আদালতে মামলার তারিখ থাকে। আবার তাদের আনার জন্য নিরাপত্তারও বিষয় জড়িত রয়েছে। ফলে অনেক সময় সাক্ষী এলেও ঠিকমতো আসামিদের হাজির করতে না পারায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, আইনে বলা আছে অবশ্যই আসামিদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ করতে হবে। অনেক সময় বিচারকও থাকেন না। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর বলেন, একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলার চার্জশিটটি প্রায় এক বছর আগে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আসামিদের অনুপস্থিতির কারণে এটিরও চার্জ গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।