মৌলভীবাজারে বেড়েছে গাছ চুরি, সন্দেহের তীর বন বিভাগের দিকে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ৯:৪৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের সাথে সংযুক্ত চাউতলী বিট থেকে পাচার করা বিশাল আকৃতির একটি গর্জন গাছ শহরের একটি সো-মিল থেকে উদ্বার করেছে বন বিভাগ। শনিবার সন্ধায় সো-মিলের পাশ থেকে ৫ টুকরায় ৯১ সিএফটি গাছ উদ্বার করা হয়।
শ্রীমঙ্গল সহকারী বন সংরক্ষক মো: আবু বক্কর সিদ্দিকি জানান, চাউতলী বিট থেকে একটি গর্জন গাছ শনিবার সন্ধায় একটি সো-মিলে নিয়ে আসতেছে খবর পান। পরে রাত ৯টার দিকে তিনি ফরেষ্ট গার্ডদের নিয়ে শহরের সোনা মিয়ার সো-মিলের পাশ থেকে ৫ টুকরায় ৯১ সিএফটি গাছ আটক করেন। এ সময় গাছের পাশে কোন মালিক পাওয়া যায়নি। পরে তাদের ফরেষ্ট গার্ড মোহাম্মদ আলীকে ফোন করে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের অফিস সহকারী সালেহ আহমদ জানান এটি তাদের গাছ। মোহাম্মদ আলী জানান, তাকে ফোন করে গাছটি তাদের বলার পর তিনি দেখেছেন গাছে কোন হাতুরীর সীল নেই। বা কোন টিপি (চলাচল পাস) নেই। তারা গাছটি উদ্বার করে বন অফিসে নিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম জানান, এটি তাদের অকশনে বিক্রিত গাছ। গাছটি কিছুদিন আগে ঝড়ে উপরে পড়েছিলো। তবে এটি অকশন হলে এতে হাতুরীর সীল নেই কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি দেয়ার আগেই অকশনার গাছটি নিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে বনের মুল্যবান এই গাছ যার বাজার মুল্য লক্ষ টাকার উপরে এটি রাতের আঁধারে বন থেকে বের করে নিয়ে আসা এবং হাতুরী না থাকায় বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছেন পরিবেশ প্রেমীরা।
এ ব্যাপরে অকশনার জয়নাল মহালদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আনুমানিক ৩৭/৩৮ হাজার টাকা দিয়ে কিছদিন আগে একটি গর্জন গাছ তিনি অকশন নিয়েছেন। তবে বন বিভাগ তাকে মাল বুঝিয়ে না দেয়ায় তিনি তা আনেননি। আর শনিবারের গর্জনটিও তিনি আনেননি বলে জানান।
অপর দিকে শুক্রবার ভোরে লাউয়াছড়া পৃথক স্থান থেকে গাছ কেটে ট্রাকে তুলে পাচারের সময় ট্রাকসহ প্রায় ৩০-৩২ টুকরো গাছ আটক করেন বলে জানান, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান।
কমলগঞ্জ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আহাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লাউয়াছড়া উদ্যানের বাগমারা এলাকা থেকে ৫টি গাছ ও মুজিবের টিলা নামক স্থান থেকে ৭টি চিকরাশি গাছ কেটে পাচার করছিলো সঙ্গবদ্ধ চোরচক্র।
এদিকে গোপন খবর পেয়ে লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা সেখানে রওয়ানা হলে গাছচুর চক্রও সে খবর পেয়ে যায়। বন বিভাগ রওয়ানা দেয়ার সাথে সাথে ট্রাকটি নিয়ে পালিয়ে যায় পাচারকারী চক্র। এদিকে বন বিভাগের কর্মীরাও ট্রাকটির পেছনে ধাওয়া করে রাত ৩টায় শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও এলাকা থেকে গাছের খন্ডাংশসহ (ঢাকা মেট্রো-ট-২০৭৯৭২) নাম্বারের ট্রাকটি আটক করতে সক্ষম হন। এ সময় চালক ও চোরচক্র পালিয়ে যায়।
এদিকে শুক্রবার বনের ভিতরে অভিযান পরিচালনা করে পাচারের জন্য কেটে রাখা বাকী গাছগুলোও উদ্বার করেন বন বিভাগের কর্মীরা।
এ ব্যাপারে পরিবেশ প্রেমী প্রভাষক জলি পাল জানান, সম্প্রতি গাছচুরির পরিমান বেড়েছে। এটি দমন করতে শক্ত হাতে এগিয়ে আসতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তা না হলে লাউয়াছড়াসহ আশে পাশের সংরক্ষিত বন শেষ হয়ে যাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে আমাদের প্রাণীকুল।