সিলেটে উৎপাদিত ‘নাগা মরিচ’ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১:২৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় এখন নাগা মরিচের চাষ হচ্ছে। চাষীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাণিজিকভাবে উৎপাদিত এই মরিচ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। লাভ জনক হওয়াতে ও বাসাবাড়ির সাথে বা অল্প জমিতে চাষ করা যায় বলে নাগা মরিচ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে।
সিলেটে আঞ্চলিক নাম নাগা মরিচ। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এটিকে বোম্বাই মরিচ বা ফোটকা মরিচ বলা হয়। নাগা মরিচ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এবং নিকটবর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের আসাম রাজ্যের হাইব্রিড বা মিশ্র প্রজাতি। এটি ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে, এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে জন্মায়। এ ছাড়াও এটি শ্রীলঙ্কার গ্রামাঞ্চলেও জন্মায়, সেখানে ‘নাই মিরিচ’ নামে পরিচিত। সিলেটে এই মরিচের ভিন্ন নাম রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় কালা নাগা, চ্যাপা নাগা বৈশাখী নাগা নামেও পরিচিত। কোথাও কোথাও এটি ভূত জলোকিয়া নামেও পরিচিত। ‘নাগা মরিচ’ মরিচের প্রজাতি হলেও এটি একটি দ্বিপ্রজাতির মধ্যকার মিশ্র প্রজাতি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও সিলেটের কানাইঘাট-জৈন্তাপুরে নাগামরিচের উৎপাদন হয় বেশি। আর চলতি মৌসুমে জৈন্তাপুরে উৎপাদিত ‘নাগামরিচ’র ঝাল এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে। অর্থাৎ- সিলেটের নাগামরিচ এখন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা ও মাধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এর ফলে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষীরা নাগামরিচ চাষে হয়ে উঠেছেন আগ্রহী।
জানা গেছে, সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় এখন নাগা মরিচের চাষ হচ্ছে। চাষিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাণিজিকভাবে উৎপাদিত এই মরিচ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। দেশ-বিদেশে চাহিদা থাকায় সিলেটের জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার ও মৌলভীবাজারের বড়লেখাতে বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে নাগা মরিচের চাষ। এ ছাড়া সিলেটের আরো কিছু উপজেলাতে বিচ্ছিন্নভাবে এই মরিচের চাষ হচ্ছে। দেশে চাহিদা মিটিয়ে এই মরিচ এখন যাচ্ছে বিদেশেও। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে নাগা মরিচ রপ্তানি হচ্ছে। এদিকে, মরিচের চাষ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন জায়গায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় কৃষিবিভাগ।
জানা গেছে, জৈন্তাপুরের নিজপাট, হরিপুর ও দরবস্ত ইউনিয়নে নাগামরিচের চাষ বেশি হয়। বাজারে চাহিদা থাকায় নাগামরিচের দামও ওঠানামা করে। মৌসুমে নাগামরিচের প্রতিটি ৫-৭ টাকা হলেও অমৌসুমে প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। চলিত মৌসুমে জৈন্তাপুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১৫০ হেক্টর জমিতে নাগামরিচের চাষ হয়েছে। চাষীরা এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে নাগামরিচ বাজারজাত করতে শুরু করেছেন। জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২০১৮ সালে ১২০ হেক্টর এবং ২০১৯ সালে ১৫০ হেক্টর কৃষি জমিতে নাগামরিচ চাষ হয়েছে। নাগামরিচ বিদেশে রপ্তানি করতে ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে জৈন্তাপুর উপজেলার ১শ’ জন কৃষকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাগামরিচ চাষে আগ্রহী কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। নাগামরিচ চাষে উৎসাহিত করতে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ‘ক্রপ এক্সপার্ট এসোসিয়েশন’ নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জৈন্তাপুরের নাগামরিচ বিদেশে রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ঝালপ্রিয় সবার কাছেই নাগামরিচের কদর আলাদা। নাগা মরিচ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আঁচার তৈরি হয়। সাধারণ মরিচ থেকে বহুগুন বেশি ঝালের কারণে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস নাগামরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।