বিশ্বনাথে প্রতিবন্ধী পাঁচ ভাইবোনের মানবেতর জীবনযাপন!
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জানুয়ারি ২০২০, ৫:২৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
হতদরিদ্র আলিমুন নেছা। পাঁচ মেয়ে ও তিন ছেলে নিয়ে ৯ সদস্যের একটি পরিবার। ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছাড়া প্রথম ৫ সন্তানই প্রতিবন্ধী। স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। অভাবের সংসারে পাঁচ প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আলিমুন নেছা।
এতিম অসহায় এই প্রতিবন্ধীদের অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে উপবাস থাকতে হচ্ছে এই পরিবারের সদস্যদের।
আলিমুন নেছা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার জানাইয়া নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল জলিলের স্ত্রী। এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার প্রতিন্ধী থাকলেও একই পরিবারের পাঁচ সদস্য প্রতিবন্ধী হওয়ার ঘটনা বিরল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলিমুন নেছার ৮ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ৩৩ বছর বয়সী মেয়ে হাজেরা বেগম বাক প্রতিবন্ধী। এছাড়া দ্বিতীয় মেয়ে রুবেনা (৩০), বড় ছেলে আব্দুল আজিজ (২৮), মেয়ে সুবেনা (২৬) ও সাবিনা (২৪) বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর শারীরিকভাবে সুস্থ দুই ছেলের মধ্যে একজন বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজে ও আরেকজন স্থানীয় একটি মাদরাসায় অধ্যয়নরত। আর সবার ছোট মেয়ে তাসলিমা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আলিমুন নেছা জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে জীবনযাপন করছি। প্রথম পাঁচ সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সরকার থেকে প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ভাতায় এবং প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোনো মতে চলছে সংসার। কখনো খাই আবার কখনো উপবাস থাকি। ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই।
তিনি জানান, দুই তিন বছর আগে বিশ্বনাথ উপজেলার তৎকালীন ইউএনও, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সরেজমিনে এসে নগদ বিশ হাজার টাকা দিয়ে যান। এ সময় প্রতিবন্ধীদের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু তিন বছরেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
এ ব্যাপারে এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরণা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
আলিমুন নেসার চাচাত ভাই গিয়াস উদ্দিন জানান, সরকারি সামান্য ভাতা দিয়ে ৯ জনের পরিবার চালিয়ে যেতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন তাদের মা। পরিবারে রোজগারে কোনো ব্যক্তি না থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। এ পরিবারের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের পাশাপাশি যদি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এই প্রতিবন্ধী পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হয় তাহলে অনেক উপকার হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা বড় প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছয়ফুল হক বলেন, ওই পরিবারের তিনজনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড অপ্রতুল হওয়ায় তাদের সবার ভাতা দেয়া যাচ্ছে না। সরকার একই পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করলে তাদের সবাইকে ভাতার আওতায় আনা হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, বর্তমানে কোনো পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি আছে দেশের শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা হবে। সেটি হলেই ওই পরিবারের সবাইকে ভাতা দেয়া সম্ভব হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া জানান, এই উপজেলায় অনেক প্রতিবন্ধী রয়েছে। তাদের জন্য কিছু পরিকল্পনা করেছি। তবে একই পরিবারের পাঁচ জন প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদেরকে বিশেষভাবে দেখা হবে।